শনি. ডিসে. 14th, 2024

অপপ্রচারের জবাব দিতে প্রবাসীদের পাশে চান প্রধানমন্ত্রী

সরকার ও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের উপযুক্ত জবাব দিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের অর্জিত মর্যাদা ও সম্মান ধরে রেখে বিশ্বব্যাপী মাথা উঁচু করে চলতেও আহ্বান জানান তিনি।

নিউ ইয়র্কে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশিদের শনিবার দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ভার্চুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে তিনি সংকটকালীন সময়ে দেশের পাশে থাকার জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান বলে জানিয়েছে বাসস।

প্রধানমন্ত্রী প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেশে আরও বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশের অভূতপূর্ব উন্নয়নের বাস্তব চিত্র সর্বত্র ছড়িয়ে তাদের সহায়তাও চান।


জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে অংশ নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউ ইয়র্কে যান। সেখানে সাধারণ অধিবেশন ও বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে অংশগ্রহণ শেষে শনিবার তিনি ওয়াশিংটন ডিসিতে গেছেন।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ভাচুর্য়ালি দেওয়া বক্তৃতায় শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের বিরুদ্ধে চালানো অপপ্রচারের তাৎক্ষণিক উপযুক্ত জবাব দিন।”

তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধী ও জাতির পিতার খুনিদের আত্মীয় স্বজনদের পাশাপাশি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া অর্থপাচারকারীসহ নানা অপরাধীরা রয়েছে এ অপপ্রচারের নেপথ্যে।

তিনি বলেন, “সোশাল মিডিয়ায় যারা অপপ্রচার চালাচ্ছে, তাদের বেশির ভাগকেই অপকর্মে জড়িত থাকার জন্য চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে বা অপরাধ করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে।”

সোশাল মিডিয়া ব্যবহার করে সরকার এবং বাংলাদেশ সম্পর্কে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দিয়ে অন্যদের সবক দিচ্ছেন এমন ব্যক্তিদের চরিত্র ও অপকর্ম জনসমক্ষে তুলে ধরার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “তাদের কথায় কর্ণপাত করবেন না বরং আমাদের উন্নয়নকে জনগণের সামনে তুলে ধরুন।“

সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে এগিয়ে নিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্পর্কে আপনার এলাকার কংগ্রেসম্যান, সিনেটর ও নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অবহিত করুন এবং তাদের সাথে যোগাযোগ বজায় রাখুন।“

তিনি বলেন, বিএনপি জামায়াত জোট ও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাজেটের আকারের তুলনামূলক চিত্র দেখে তাদের দ্বারা কতটা উন্নয়ন হয়েছে তা বিচার করতে পারবেন।

“বিএনপি আমলে বাজেটের আকার ছিল মাত্র ৬০ হাজার কোটি টাকা। আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ বাজেট ছিল ছয় লাখ কোটি টাকার ওপরে।“

বাংলাদেশের ভাবমূর্তি অক্ষুন্ন রেখে সারাবিশ্বে চলার জন্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি আবারও আহ্বান জানিয়ে তিনি মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ এনে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প থেকে তহবিল প্রত্যাহারে বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় তাদের ধন্যবাদ জানান।

তিনি বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বদলে দিয়েছে এবং প্রমাণ করেছে যে বাংলাদেশ যা বলে তা করার ক্ষমতা রাখে।

প্রধানমন্ত্রী আবারও জলবায়ু পরিবর্তন, কোভিড ১৯ মহামারী, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ্বে আসন্ন তীব্র খাদ্য সংকট সম্পর্কে দেশবাসীকে সতর্ক করে ভবিষ্যতে সবাইকে আরও বেশি করে খাদ্য উৎপাদনের আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, “ যেহেতু একটি প্রকট খাদ্য সংকট আসন্ন, তাই দেশে আপনার স্বজনদের বলুন, বিভাজনের কারণে দেশের কোন জমিই অনাবাদি রাখা যাবে না।“

বাংলাদেশ ইতোমধ্যে একটি ডিজিটাল দেশে রূপান্তরিত হয়েছে জানিয়ে তিনি ভোট কারচুপি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের পাশাপাশি গুম, খুন, দুর্নীতি, অর্থ পাচার ও অস্ত্র বাণিজ্যসহ সব ধরনের অপকর্মের রাজনীতি চালু করার পরও নির্বাচনী প্রক্রিয়া, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে কথা বলায় বিএনপির কঠোর সমালোচনা করেন।

তিনি বলেন, “ভোট কারচুপিতে বিএনপি চ্যাম্পিয়ন ছিল। তারা ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার দিয়ে ভোটার তালিকা তৈরি করেছিল।“

শেখ হাসিনা বলেন, দেশের সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকার জন্য রাজনীতিতে হত্যা, গুম, দুর্নীতি, মানি লন্ডারিং এবং ঋণ খেলাপি সংস্কৃতির মত সব খারাপ কাজের সূচনা করেছিলেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধাপরাধীদের যে বিচার শুরু করেছিলেন, জিয়াউর রহমান সেটি বন্ধ করে দেন এবং তাদের উপদেষ্টা ও মন্ত্রী বানিয়েছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, খালেদা ও এরশাদও একই কাজ করেছেন।

“তার (জিয়া) স্ত্রী খালেদা জিয়া এতিমদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতির মামলায় এবং তার ছেলে তারেক রহমান মানি লন্ডারিং ও ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে জিয়ার আরেক ছেলে প্রয়াত কোকোর কাছ থেকে অবৈধভাবে চুরি করা ২০ কোটি টাকা ফেরত এনেছে।“

প্রধানমন্ত্রী জানান, জিয়া পরিবার এত বিপুল অর্থ সংগ্রহ করেছে যে যুক্তরাষ্ট্রে তার ছেলে জয়কে অপহরণ ও হত্যার উদ্দেশ্যে তথ্য সংগ্রহে এক এফবিআই কর্মকর্তাকে নিয়োগ করেছিল।

আওয়ামী লীগ সবসময় জনগণের অধিকার রক্ষায় বিশ্বাসী জানিয়ে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ ক্যান্টনমেন্টে বন্দী অবস্থা থেকে জনগণের ভোটাধিকারের ক্ষমতা ফিরিয়ে দিয়েছে।“

শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সাল থেকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বাংলাদেশ এখন আর্থ-সামাজিকভাবে উন্নত হচ্ছে। আর বিএনপি-জামায়াত জোট বারবার অগ্নিসংযোগ, সন্ত্রাস ও হত্যার সংস্কৃতির আশ্রয় নিয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু জনগণ কখনই তাদের কর্মকাণ্ডে সাড়া দেয় না। কারণ তারা হত্যা, দুর্নীতি, অর্থ পাচার ও অস্ত্র ব্যবসাসহ প্রতিটি অপকর্মের সঙ্গে জড়িত।

বর্তমান সরকার সবসময় ন্যায়ের পক্ষে বলে জাতির পিতা হত্যা মামলার বিচার করেছে এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সূচনা করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনি ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে বাংলাদেশ কলঙ্কমুক্ত হয়েছে।

প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষকে একটি সুন্দর ও উন্নত জীবন দেওয়ার পদক্ষেপের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে ১০ লাখ পরিবারকে বিনা খরচে বাড়ি দেওয়া হয়েছে। জীবন ও জীবিকা নির্বাহের জন্য আয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

প্রবাসীদের জন্য নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের কল্যাণে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।