দুইবছর পর পাটগ্রাম সীমান্তে দুই বাংলার স্বজনদের মিলন মেলা
লালমনিরহাট সংবাদদাতা :
করোনা পরিস্থিতিতে দুইবছর বন্ধ থাকার পর আবারও লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার নবীনগর-বাউরা সীমান্তে দিনব্যাপি বসে দুই বাংলার মিলন মেলা। সনাতন ধর্মালম্বীদের কালীপূজা উপলক্ষে দুই বাংলার মানুষ তাদের স্বজনদের এক নজর দেখেতে কথা দুর দুরান্ত থেকে ছুটে কাঁটাতারের বেড়ার পাশে। গত শুক্রবার সকাল ১০টা দিনব্যাপি দুই দেশের হিন্দু ধর্মালম্বী ছাড়াও মুসলমানসহ শত শত মানুষ দুই বাংলার আত্মীয়-স্বজন একে অপরকে একনজর দেখার জন্য ভারতীয় কাঁটা তারের বেড়ার দু’পাশে ভীড় জমান। সরেজমিন দেখা যায়, দুই বছর পর ভারতে থাকা মেয়ে কবিতা রানীকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন মা কামনী বালা (৬০)। বাবা খোকা চন্দ্র (৭০) ও বড় বোন ছবিতা রানীকে দেখে অঝড়ে কাঁদছেন ভারতের ধুবগুড়িতে থাকা মেয়ে কবিরা রানী (৩০)। এ সময় কবিতা রানীর কোলে শিশু সন্তান থাকায় গেট খুলে দিয়ে তার বাবা মা বোনের সাথে দেখা করার সুযোগ দিয়ে মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)।
পাটগ্রাম উপজেলার বাউরা নবীনগর গ্রামে খোকা চন্দ্র ও তার স্ত্রী কামনী বালা মেয়ে কবিতার বিয়ে হয় ভারতের ধুবগুড়িতে। শুধু প্রতিবছর কালী পূজার সময় তাদের সীমান্তে দেখা হয়। সানিয়াজান নদীর হাটু জল চা বাগান পেড়িয়ে দুই বাংলার মিলন মেলা নজর কেড়েছে মানুষের। মাঝখানে কাঁটাতারের বেড়ার দুই পাশে দাঁড়িয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে মা-মেয়ে, জামাই-শ্বাশুড়িসহ আত্মীয় স্বজনের এ হৃদয় বিদারক দৃশ^্যও দেখার জন্য এসেছেন অনেকে। দুই বাংলার মানুষের মধ্যে বিনিময় হচ্ছে খাদ্যসামগ্রী। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) এর পক্ষ থেকে বিতরণ করা হচ্ছে খাবার। খাবার পেয়ে খুশি শিশু-কিশোরা। এ জনম জনমের মিল বন্ধন। জানা গেছে, পাটগ্রাম উপজেলার নবীনগর-বাউরা সীমান্তের মেইন পিলার ৮৮৫ এর সাব পিলার ১১ এস এর কাছে ভারতীয় কুচলিবাড়ী ৪০ বিএসএফ ক্যাম্পের নিকট সনাতন ধর্মালম্বীদের কালীপূজা উপলক্ষে প্রতিবছর বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের মানুষের মধ্যে মিলন মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় ভারতীয় কুচলিবাড়ী ৪০ বিএসএফ ক্যাম্পের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে থেকে আসা শিশু কিশোরসহ অন্যনদের মধ্যে (প্রসাদ) খাবার পরিবেশন করা হয়। দুই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা লোকজন তাদের আপনজনদের দেখে আবেগ আপ্লুত হন ও কুশল বিনিময় ও উভয়ে খাবার, ফলমুল বিনিময় করেন। পাটগ্রাম উপজেলার বাউরা বাজার এলাকা থেকে আসা নাজমা বেগম বলেন, ভারতে ভাই ভাবী বসবাস করেন, তাদের সাথে দেখা করতে এই কাঁটাতারের বেড়ার কাছে এসেছি। করোনাভাইরাসের কারণে দুইবছর গত হলো ভাইয়ের মুখ দেখি না। এবার কালী পূজার কারনে কাঁটাতারের বেড়ার কাছে এসেছি ভাইকে এক নজর দেখতে। হাতীবান্ধার বড়খাতা ইউনিয়ন থেকে আসা শ্রী সুদর্শন বলেন, ভারতে আমার ভাগনী থাকেন তাদের সাথে দুই বছর পর দেখা হল। অনেক ভাললাগছে। এ বিষয়ে বাউরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বসুনিয়া বলেন, করোনার কারনে দুই বছর মিলন মেলা না হলেও এ বছর দুই বাংলার মিলন মেলা হয়েছে। দুই বাংলার আত্মীয়-স্বজনের সাথে তারা উভয়ে দেখা করেন এবং কুশলবিনিময় করেন। দুই বাংলার এই সম্পর্ক যেন আজীবন থাকেন।