বৃহস্পতি. এপ্রিল 18th, 2024

কাউনিয়ায় কৃষি কর্মকর্তার প্রচেষ্টায় বদলে গেছে তিস্তা চরের অর্থনীতি

স্টাফ রিপোর্টার ঃ
কাউনিয়া উপজেলা পরিষদের প্রনোদনা ও উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ সাইফুল আলম এর সদুরপ্রসারী পরিকল্পনা এবং ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বদলে দিয়েছে চরাঞ্চলের কৃষি অর্থনীতিরচিত্র।
গত তিন বছরে তিস্তা নদীর জেগে উঠা অনাবাদী ২০০ হেক্টর বালি যেন সাদা সোনায় পরিনত হয়েছে। ধু-ধু বালু চরে এখন সবুজের বিপ্লব।


সরেজমিনে চরাঞ্চলে গিয়ে দেখা গেছে তিস্তার জেগে উঠা চরে এখন চাষ হচ্ছে আলু, মিষ্টি কুমড়া, মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, স্কোয়াস, গম,ভুট্ট্রা। চরের বর্তমানে সবুজের মনমুগ্ধকর সবুজের সমারোহ যে কোন প্রকৃতি প্রেমিকে কাছে টানে। বিশেষ করে ধু-ধু বালু চরে যেখানে কোন কিছুই ফলানো সম্ভব ছিল না সেই চরে কুমড়া স্কোয়াস, ওলকপি চাষ করে সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। বালিতে কুমড়া জাতীয় ফসলের সবুজের বিস্তার পুরোচর সবুজ চাদরে ঢেকে গেছে। শুধু তাই নয় পুরো চরেই যাতে নিরাপদ কুমড়া ফসল উৎপাদন করা যায় সে জন্য শোভা পাচ্ছে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ও ইয়োলো স্টিক ট্রাপ।


চর শাহবাজের কৃষক মো: রেজাউল ইসলাম স্বাধীন তাদের সফলতার গল্প শোনাতে গিয়ে বলেন উপজেলা কৃষি স্যার তাদের চরে তিনটি কৃষক দল গঠন করে তাদের তিস্তার বালুতে কিভাবে বিষমুক্ত আবাদ করা যায় সেজন্য প্রশিক্ষন,সার ,বীজ,সেচের টাকা, পরামর্শ প্রদান করেন। আমি প্রায় ১শ’ শতক বালু চরে মিষ্টি কুমড়া ও স্কোয়াশ চাষ করেছি। গাছের অবস্থা খুবই ভাল। এখন পর্যন্ত কোন রোগ বা পোকার আক্রমণ হয় নি। হরিচরন শর্মা চরের শফিকুল বলেন প্রথমে বিশ^াস করতে পারিনি যে বালির মধ্যে কিভাবে মিষ্টি কুমড়া, স্কোয়াশ, ওল কপি হবে, কিন্তু এমন গাছের চেহারা ও ফলনের আভাস দেখে সকলের মধ্যে আনন্দ ফুটে উঠেছে। চরের কৃষকদের ধু-ধু বালুচরে সবুজের বিপ্লব নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি এর সকল কৃতিত্ব দেন কৃষি বিভাগকে, বিশেষ করে কৃষি অফিসার মোঃ সাইফুল আলম ও এসএএও মোঃ এমদাদুল হক এর।


কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সাইফুল আলম জানান, তিস্তা চরাঞ্চলে আমি শুধু সবাইকে অনুপ্রেরনা ও সহযোগিতা করেছি। এ পরিকল্পনা কিভাবে গ্রহন করলেন ? তিনি বলেন ২০১৮ সালে এ উপজেলায় যোগদান করার পর জেগে উঠা আবাদ অযোগ্য ধু-ধু বালু চর কিভাবে ফসল আবাদের আওতায় আনা যায় তা নিয়ে পরিকল্পনা করি। তিনি জানান কাউনিয়ায় ৩০ টি চরে জমির পরিমান ২৪০০ হেক্টর এর মধ্যে স্থায়ী চরে জমির পরিমান ১৯৫০ হেক্টর। সেখানে সব ধরনের ফসল উৎপান হয় কিন্তু অস্থায়ী বালুর চরের পরিমান প্রায় ৪৬০ হেক্টর সেখানে কোন ফসল হতো না। আমার মুল লক্ষ্য ছিল এই ৪৬০ হেক্টর অনাবাদি বালিচর কে আবাদের আওতায় আনা। আমার উদ্দ্যোগের কথা উপজেলা পরিষদে জানালে পরিষদ অর্থের সংস্থান করে।গত তিন বছর ধরে উপজেলা পরিষদ চরের আবাদ বৃদ্ধিতে কৃষকদের প্রনোদনা সহয়তা দিয়ে যাচ্ছেন। এই অর্থের মাধ্যমে চর ও চাষী নির্বাচন করে গ্রæপ গঠন করে মিষ্টি কুমড়া, মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, স্কোয়াস, চাষ করানো হয়। এ জন্য প্রয়োজনীয় কৃষি উপকরণ,পিপিপি এর ভিত্তিতে সরবরাহ করা হয়। এ ছারা কোন ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করা না হয় সে জন্য প্রশিক্ষণ, জৈবসার, সেক্স ফেরোমন ফাঁদ, ইয়োলো স্টিক ফাঁদ কৃষকদের মাঝে সরবরাহ করি। এই বছর প্রায় ৫০০ একর বালু চরে যে মিষ্টি কুমড়া, স্কোয়াশ উৎপাদিত হবে তা সম্পূর্ন বিষমুক্ত, এর বাজার মূল্য বেশি হবে। এছাড়া এ কুমড়া যাতে বিদেশে রপ্তানী করা যায় সে জন্য কৃষি বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে।এই কৃষি কর্মকতার কারনে প্রায় ৫০০ একর অস্থায়ী বালুর চরের জমি আবাদের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।