বৃহস্পতি. মার্চ 28th, 2024

জনপ্রিয়তা পেয়েছে লালমনিরহাটে চিকিৎসকের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

এস. কে সাহেদ, লালমনিরহাট :

রোগি দেখার চেম্বারে টেবিলে সাজানো পুষ্টিকর চাল, ডাল, আটা, তেল, মসলাসহ বিভিন্ন জাতের ফল। কোন খাবারে কি পুষ্টি, তা হাতে কলমে শিখিয়ে তবেই চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র (প্রেসক্রিপসন) দেয়া হচ্ছে। এছাড়া চেম্বারে আসা রোগিদের শিখানো হচ্ছে রান্নার কৌশল। সরেজমিন লালসনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার সরকারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-এ কর্মরত শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ জুনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. আজমল হকের চেম্বারে এ দৃশ^্য চোখে পড়ে। রোগিদের পুষ্টিকর খাদ্যের দিকে মনোনিবেশ করাতে ডা. আজমল হক রোগি দেখার চেম্বারের টবিলে নমুনা হিসেবে সাজিয়ে রেখেছেন তেল, মসলাসহ বিভিন্ন জাতের ফল ও পুষ্টিকর সবজি। চিকিৎসা নিতে আসা রোগিদের হাতে কলমে শেখাচ্ছেন এসব খাবারের রান্না পদ্ধতি। ওষুধের সঙ্গে পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যেমন বাড়বে, তেমনি রোগ নিরাময়ও ঘটবে। এ সময় চোখে পড়ে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আজমল হকের চেম্বারের সামনে শিশু রোগিদের দীর্ঘ লাইন। জানা গেছে, গ্রামের গর্ভবতী মায়েরা পেটের সন্তান মোটা হবে এবং সন্তান প্রসবে কষ্ট হবে ভেবে খাবার কমিয়ে দেয়া এবং মা ও শিশুদের শরীরে কোনো সমস্যা দেখা দিলে খাদ্য তালিকা থেকে কিছু খাবার বন্ধ করে দেয়ার মতো কু-সংস্কারে বিশ^াসী। যা মা ও নবজাতকের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ফলে ওই মা ও শিশু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারায়। রোগ নিরাময়ে বেশ বেগ পেতে হয় এবং শিশুর স্বাস্থ্যহানী ঘটে।

আর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে মানবদেহে বিভিন্ন রোগ বাসা বাঁধে। শুধু পুষ্টিকর খাদ্যের অভাবেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এছাড়া খাদ্য গ্রহণের নিয়ম না জানার কারণে গ্রামের শিশুরা পুষ্টিহীনতায় ভোগে। ঘটছে না শিশুর মেধার বিকাশ। এখনো গ্রামের বেশির ভাগ লোকজন মনে করে পুষ্টিকর খাবার হচ্ছে মাছ, মাংস ও ফল। আসলে তা নয়। একেকটি খাবারে একেকটি পুষ্টিগুণ বিদ্যমান। মৌসুমী ফল ও মৌসুমী সবজিতে প্রচুর পুষ্টিগুণ রয়েছে। অনেকের ধারণা, মসলা শুধু রান্নার স্বাদ বাড়ায়, যা ঠিক নয়। মসলাও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। গ্রামের এসব অতি সাধারন নারীদের কথা চিন্তা করে কোন রান্নায় কি পরিমাণ মসলা ব্যবহার করলে খাবারে পুষ্টিগুণ ঠিক থাকবে, সেটা হাতে কলমে শেখাচ্ছেন ডা. আজমল হক।

চার মাসের শিশুর জ্বর নিয়ে হাসপাতালে আসা মা জান্নাতি বেগম বলেন, চিকিৎসকের কাছে এলে আগে বিভিন্ন টেস্ট করাতে বলেন। কিন্তু ডা. আজমল হকের নিয়মটা ভিন্ন। তিনি আগে জানতে চান, বাড়ির কি ধরনের খাবার খাওয়া হয়, সেসব খাবার রান্নার পদ্ধতিই বা কী? সব শুনে তিনি কোন খাদ্যে কোন পুষ্টি এবং পুষ্টিকর খাবার তৈরির পদ্ধতিও বর্ণনা করেন। সবশেষে চিকিৎসার প্রেসক্রিপশন লিখেন। আর সেই প্রেক্রিপশনের ওপর লিখেন দেন, কোন রোগের জন্য কোন পুষ্টিকর খাবারটি খাওয়াতে হবে। হাসপাতাল গেটের এক ব্যবসায়ী বলেন, ডা. আজমল হক এ হাসপাতালে যোগদানের পর থেকে রোগীদের চাপ বেড়েছে। বিশেষ করে মা ও শিশুদের ভিড় বেড়েছে এ হাসপাতালে। ডা. আজমল হক জানান, গ্রামীণ মায়েরা নানা কু-সংস্কারে বিশ^াসী। এখনও পুরনো আমলের চিন্তা ভাবনা নিয়ে চলেন। শিশুদের কিছু হলে ঝাড় ফুঁকের জন্য ছুটে যান। পরে রোগ অস্বাভাবিক বেড়ে গেলে হাসপাতালে আসেন। তখন চিকিৎসা দিতে বেশ সময় লাগে। পেটের সন্তান মোটা হওয়ার ভয়ে এখনও অনেক গর্ভবতী মাকে কম খাওয়ানো হয়। যা মা ও নবজাতকের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি।

অথচ গর্ভবতী মায়েদের পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার প্রয়োজন। গর্ভের সন্তান বেঁচে থাকে মায়ের খাবার থেকে নির্যাস পেয়ে। তাই দ্বিগুণ খাবার প্রয়োজন গর্ভবতী মায়েদের। মৌসুমী ফল আর সবজিতে প্রচুর পুষ্টি। অথচ না জানার কারণে সহজে পাওয়া এ পুষ্টি থেকেও বঞ্চিত থাকে গ্রামের মা ও শিশুরা। তিনি বলেন, এমন কু-সংস্কার থেকে গ্রামের নারীদের ফিরে আনতে চিকিৎসা পদ্ধতিতে পরিবর্তন নিয়ে এসেছেন। আগে পুষ্টির ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। পরে চিকিৎসা। তাই টেবিলে পুষ্টির ট্রে সাজিয়ে রেখেছি। চিকিৎসা নিতে আসা মায়েদের হাতে কলমে পুষ্টিকর খাদ্য ও তা রান্নার কৌশল শেখানোর চেষ্টা করছি। শিশুরা ভালো থাকলে ভালো থাকবে আগামীর বাংলাদেশ।