শুক্র. মার্চ 29th, 2024

জোয়ারের পানিতে নষ্ট কয়েক হাজার একর আমন ক্ষেত, চরম হতাশায় কৃষকরা

নিউজ ডেস্ক:

মেঘনা নদীর অব্যাহত জোয়ারের তোড়ে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর ও রামগতি উপজেলার কয়েক হাজার একর আমন ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে চরম হতাশা গ্রস্ত হয়ে পড়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত প্রান্তিক কৃষকেরা।

কমলনগর উপজেলার চরমার্টিন এলাকার কৃষক কাশেম মাঝি চলতি মৌসুমে এক একর জমিতে আমন ধানের চারা লাগিয়েছেন। জমিতে হালচাষ, ধানের চারা এবং চারা লাগানো বাবদ শ্রমিক খরচ হয়েছে ১৫ হাজার টাকার মতো। কিন্তু জোয়ারের পানির কারণে তার সে ধানের ক্ষেত পুরো বিনষ্ট হয়ে গেছে।

একই এলাকার আবুল কালাম আড়াই একর জমিতে আমনের চাষাবাদ করেছেন। এতে তার খরচ হয়েছে ২৫ হাজার টাকার মতো। কৃষক নুর ইসলামও ১৫ হাজার টাকা খরচ করে সোয়া একর জমিতে ধানের চারা লাগিয়েছেন। তার ক্ষেত এখন ফাঁকা। পানির স্রোতের তোড়ে ধানের চারা নষ্ট হয়ে গেছে। শুধু তারাই নন, কমলনগর এবং রামগতি উপজেলার কয়েকশ কৃষকের হাজার হাজার একর জমির রোপা আমন ধানের ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। এতে তাদের পরিবারে হাহাকার সৃষ্টি হয়েছে।

কৃষক বালুল মিয়ার স্ত্রী সবুরা খাতুন জানান, অনেক কষ্টে ধারদেনা করে তারা পৌঁনে এক একর জমিতে আমন ধানের চারা লাগিয়েছেন। জমিতে সার প্রয়োগ করা হয়েছে। ধানের ক্ষেত সবুজে সমারোহ ছিলো। কিন্তু মেঘনা নদীর অতিরিক্ত জোয়ারের পানি কারণে তাদের ফসলি ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। ক্ষেত থেকে যে ধান পেতেন, তা দিয়ে তাদের কয়েক মাসের সংসার চলতো।

কমলনগর উপজেলার চরমার্টিন এলাকার কৃষক নুর ইসলাম, আজাদ, আব্দুল আলী, খবির, নুর ইসলামসহ অনেকে তাদের ধানের ক্ষেত নষ্ট হওয়ার কথা কাছে তুলে ধরেছেন।

তারা জানান, অমাবস্যার প্রভাবে গত কয়েকদিন থেকে মেঘনা নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে নদীর নোনা পানি ঢুকে ধান ক্ষেত তলিয়ে যায়। দিনে দুই বার এমন পরিস্থিতি দেখা দেয়। এভাবে দীর্ঘ সময় ধানের চারা নোনা পানির নীচে থাকার কারণে পঁচে বিনষ্ট হয়ে গেছে। পুনরায় নতুন করে চারা লাগালেও কো কাজ হবে না। জোয়ারের পানি প্রতিনিয়ত লোকালয় এবং জমিতে প্রবেশ করে। পানি নেমে যাওয়ার সময় ধানের চারাও সাথে নিয়ে যায়। চলতি মৌমুমে এসকল ক্ষেতে আর কোন ধানের চারা লগানো সম্ভব নয় বলে জানান তারা।

সরেজমিনে গতকাল বিকেলে কমলনগরের বেশ কয়েটি ইউনিয়ন ঘুরে বিনষ্ট ধান ক্ষেত্রে চিত্র দেখা গেছে। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে জোয়ার আসার পর ওইসব এলাকার ধানের ক্ষেত পানিতে নিমজ্জিত হতে দেখা যায়।

চরমার্টিন এলাকার জামাল উদ্দিন, শাহ আলশ নামে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, এ এলাকার কৃষকরা একেবারে গরীব। ধারদেনা করে তারা জমিতে আমনের চাষ শুরু করেছেন। কেউ এনজিও থেকে ঋণ, আবার কেউ ধানের উপর দাদন (সুদের বিনিময়ে টাকা) নিয়েছেন। ফসল উঠলে ঋণ পরিশোধ করে ঘোলায় ধান উঠানোর স্বপ্ন ছিলো তাদের। কিন্তু মেঘনার জোয়ারের পানির স্রোতের সাথে তাদের সপ্নও নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা অভিযোগ করে বলেন, কৃষি বিভাগ থেকে তাদের বিষয়ে কোন খোঁজ খবর নেওয়া হয়নি।

চরমমার্টিন ইউপি চেয়ারম্যান মো. ইউসুফ আলী বলেন, নদীর উপকূলীয় এলাকায় তীররক্ষা বাঁধ না থাকার কারণে জোয়ারের পানি খুব সহজে লোকালয়ে প্রবেশ করে। এতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা তৈরী করে উপজেলা প্রশাসনের কাছে দেওয়া হয়েছে।

কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান বলেন, স্ব-স্ব ইউপি কার্যালয় থেকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা এবং ক্ষতির পরিমানের তথ্য দিয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক ড. মোঃ জাকির হোসেন বলেন, সরকারী প্রনোদনা আসলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা অনুযায়ী সহযোগিতা করা হবে।