শুক্র. এপ্রিল 19th, 2024

তিতাসের মৃত্যুর দায় এড়াতে পারেন না যুগ্ম সচিব: প্রতিবেদন

অ্যাম্বুলেন্সেই মারা যায় ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র তিতাস ঘোষ
অ্যাম্বুলেন্সেই মারা যায় ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র তিতাস ঘোষ

বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাই কোর্ট বেঞ্চে বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।

পরে আদালত প্রতিবেদনের উপর শুনানির জন্য ১৪ নভেম্বর দিন রাখেন বলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার সাংবাদিকদের জানান।

প্রতিবেদনে বলা হয়, “ফেরি আটকে রাখা বা ফেরিতে অপেক্ষমাণ অ্যাম্বুলেন্সে মুমূর্ষু রোগীর থাকার কথা যুগ্ম সচিব জানতেন না। এ কারণে সরাসরি তাকে দায়ী করা যায় না।

“তবে তিনি ঘাট ব্যবস্থাপককে দীর্ঘক্ষণ আগে থেকেই পারাপারের জন্য বার্তা দিয়ে তার সঙ্গে বার বার ফোনালাপের মাধ্যমে একটা দায়ভার সৃষ্টি করেছিলেন। সর্বোপরি বিলম্বে ফেরী ঘাটে উপস্থিত হওয়া এবং তার জন্যই ফেরী অপেক্ষমাণ রাখায় এক্ষেত্রে তারও দায়বদ্ধতা রয়েছে।”

এঘটনায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন গত ২৩ অক্টোবর আদালতে দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। তাতে শুধু ঘাটে দায়িত্বরত তিন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দায়ী করা হয়েছে। যুগ্ম সচিবের দোষ খুঁজে পায়নি কমিটি।

পরে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় ও মাদারীপুর জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন চায় হাই কোর্ট। সে অনুযায়ী বুধবার প্রতিবেদনটি অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়।

মাদারীপুর জেলা প্রশাসন তদন্ত কমিটি করলেও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি করায় তদন্ত বন্ধ রাখা হয় বলে আদালতকে জানানো হয়।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে তিতাসের মৃত্যুর ঘটনায় ফেরি ঘাটের ব্যবস্থাপক আব্দুস সালাম, ঘাটের উচ্চমান সহকারী ফিরোজ আলম, প্রান্তি সহকারী খোকন ও ইনল্যান্ড মাস্টার সামছুল আলমকেই প্রত্যক্ষভাবে দায়ী করা হয়।

নড়াইলের কালিয়া পৌর এলাকার ষষ্ঠ শ্রেণির স্কুলছাত্র তিতাস গত ২৫ জুলাই সড়ক দুর্ঘটনায় মাথায় আঘাত পায়। গুরুতর অবস্থায় তাকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে ঢাকার পথে রওনা হয় তার পরিবার।

কিন্তু সরকারের এটুআই প্রকল্পে দায়িত্বরত আবদুস সবুর মণ্ডলের গাড়ির অপেক্ষায় মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ঘাটে ফেরি দাঁড় করিয়ে রাখা হয় তিন ঘণ্টা। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে অ্যাম্বুলেন্সেই মারা যায় তিতাস।

তার পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, পুলিশ, বিআইডব্লিউটিএর কর্তাদের অনুরোধ করেও সেদিন কোনো কাজ হয়নি। সরকারি জরুরি সেবার হটলাই ৯৯৯ এ ফোন করা হলেও ফেরি দ্রুত ছাড়তে কেউ কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

এ বিষয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর যুক্ত করে রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো.জহিরুদ্দিন লিমন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ৩১ জুলাই আদালত ঘটনাটি তদন্তের নির্দেশ দেয়।

পাশাপাশি ওই স্কুলছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারকে কেন ৩ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে আদালত।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সঞ্জয় কুমার বণিকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি ভবিষ্যতে এ ধরণের ঘটনা এড়াতে প্রতিবেদনে ৭ দফা সুপারিশ করেছে।