বৃহস্পতি. এপ্রিল 25th, 2024

তিস্তা নদীর পানি নেমে গেলেও রেখে গেছে ক্ষত চিহ্ন

এস এ সুজন, রাজারহাট, কুড়িগ্রাম :


বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর কুড়িগ্রামের রাজারহাটে চরাঞ্চলে ক্ষত চিহ্ন রেখে গেছে। বালুর নীচে পড়ে আছে আবাদী ফসল, টিন, আসবাবপত্র, শ্যালো মেশিন, নৌকাসহ বিভিন্ন জিনিষপত্র। একরের পর একর জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে কিংবা মাটিতে শুয়ে পড়েছে। তার ওপর পড়েছে বালুর স্তর। গতকাল বুধবার সকালে রাজারহাট উপজেলার চর তৈয়ব খাঁ ও চর বিদ্যানন্দে গিয়ে দেখা যায়, বিধ্বস্ত অবস্থা, যত্রতত্র পরে আছে গাছপালা, ঘরের চাল, জমিতে পড়ে আছে কাঁচা পাকা ধান, বাদাম, মরিচ, বেগুন, শাক সবজী ও মাস কলাইয়ের গাছ গুলো। অধিকাংশের ওপর কাঁদা বালু পরেছে।

চর বিদ্যানন্দের কৃষক মোফাজ্জল হোসেন জানান, গতবার বন্যা কম হওয়ায় আগাম ধান, আলু, বাদাম, মাস কালাই লাগাই। আমি এক একর জমিতে এসব ফসল করেছিলাম, সব শেষ হয়ে গেছে। চরের মানুষ কৃষির ওপর নির্ভর করে বেচে থাকা যে ক্ষতি হইলো সামলে উঠার কোন উপায় নাই। একই চরের পশ্চিমে একরের পর একর জমির বাদাম মাটিতে মিশে গেছে ওপরে বালির স্তর পরেছে। কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি দুই একর জমিতে আগাম বাদাম লাগিয়ে ছিলাম সব নষ্ট হয়ে গেছে কয়েক লাখ টাকা ক্ষতি। এখন পর্যন্ত কোন ত্রাণ পাইনি, কৃষি বিভাগের কোন লোক আসেনি।

চর তৈয়বখাঁর কৃষক আবুল হোসেন বলেন, জমিতে খাল হয়েছে রাতে তীব্র বেগে পানির ¯্রােত আসি সব লন্ড ভন্ড করে দেয়। পাকা ধান কেটে বাড়ীত রাখি সব ¯্রােতে ভেসে গেছে। কয়েক দিন পানির নীচে থাকা পড়ে যাওয়া পাকা ধান শুকাচ্ছে কমলা বেগম। পাশেই তার স্বামী হাজির উদ্দিন ঘর ঠিক করছিলেন।

এ সময় তিনি বলেন, ধান কেটে বাড়ির উঠানে রাখি সকালে দেখি কিছু নাই সব ভেসে গেছে। এদিকে ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের চর গতিয়শামে গিয়ে দেখা যায়, একই অবস্থা। চরের জাবেদ আলী ও শাহাদুল ইসলাম বাড়ী ঘর নিশ্চিহ্ন হয়েছে গেছে ¯্রােতের তোড়ে, শুধু ভিটে মাটি টুকু পড়ে আছে। তার মা জাহেরা বেওয়া জানায় গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টা পর হঠাৎ ধেয়ে আসে তিস্তার পানি চিৎকার করতে থাকি জামাইকে রিং দেই নৌকা নিয়ে আমাদেরকে উদ্ধার করে।

পানি কমে যাবার পর, বাড়ি ফিরে দেখি কোন চিহ্নমাত্র নেই। ঘরের মালামাল, কাপড়, আসবাবপত্র কিছুই নেই খালি ভিটা পরে আছে। চরের বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম বলেন বালুর নীচে চাপা পরা মালামাল উদ্ধারের চেষ্টা করছি। এ সময় জানায় ধান, চাল, আলুসহ বাড়িতে অনেক কিছুই ছিল। এখন কিছুই নেই। অন্য একজন বলেন, মালামাল নিয়ে যাওয়ার সময় ঘূর্নি¯্রােতে ডুবে যায় একটি নৌকা মাটি খুড়ে সেটি টেনে তোলার চেষ্টা চলছে।

চরের আরেক কৃষক শাহেদুল ইসলাম জানান, প্রতি একর জমি ৩৩ হাজার টাকা লিজ নিয়ে ছয়জন মিলে ১১ একর জমিতে আলুর চাষ করেছি খরচ পড়েছে প্রায় ৬ লাখ টাকা। বন্যার পানিতে ধুয়ে মুছে গেছে আমাদের স্বপ্ন এখন চারিদিকে ঘোর অন্ধকার। এ রকম অসংখ্য তরুনের স্বপ্ন মুছে গেছে অসময়ের এই বন্যায়। এ প্রসঙ্গে রাজারহাট উপজেলা কৃষি অফিসার সম্পা আখতার বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য প্রনোদনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূরে তাসনিম জানান, বন্যায় প্রায় ৩ হাজার পরিবারকে ত্রাণ সহায়তা দেয়ার জন্য প্রক্রিয়া চলছে। এ ছাড়া নদীর ভাঙন ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এক হাজার পরিবারের জন্য ঢেউটিন বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া মাত্রই প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে তা বিতরণ করা হবে।