শুক্র. মার্চ 29th, 2024

‘ভাড়াটে’ সুলতানদের সামনে আহত বাঘ

ডেস্ক :

জ্যান্ত বাঘের চেয়েও আহত বাঘ বেশ ভয়ঙ্কর। বাংলা সাহিত্যে এই প্রবাদের প্রচলন বেশ। মরুর বুকে পাহাড়ের শহর মাসকটে এই প্রবাদের সত্যতা প্রমাণের পালা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দলের সামনে। স্কটিশদের থাবায় অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, ওমানের বিপক্ষে একটা জয় এনে দিতে পারে পাহাড়সম স্বস্তি।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে সুলতানাত ওমানের মুখোমুখি লাল সবুজের দল। মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় শুরু হবে এই মহারণ। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে পরাজয়ে বেদনা ভুলে ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া বাংলাদেশ। শিষ্যরা যে ঠিকই ঘুরে দাঁড়াবেন সেই বিশ্বাস, আস্থা আছে প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর।
‘ছেলেদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস আছে। আমিও ওদের ওপর আস্থা রাখছি। অনেক টানটান উত্তেজনার ম্যাচ ওরা জিতেছে। ছেলেরা ওমান ও পাপুয়া নিউগিনির বাধা পার করবে, পরের রাউন্ডে যাবে, এ ব্যাপারে আমি আত্মবিশ্বাসী।’- এই ম্যাচকে সামনে রেখে ঠিক এভাবেই বলছিলেন রাসেল ডমিঙ্গো।

অস্ট্রেলিয়া-নিউ জিল্যান্ডকে উড়িয়ে দেওয়ার পর এখন মাহমুদউল্লাহদের ভাবতে হচ্ছে পুচকে ওমানের বিপক্ষে জয় পাওয়া নিয়ে। অনিশ্চিয়তার খেলা ক্রিকেটে বুঝি এমনই হয়। বিশেষ করে খেলাটা যখন ২৪০ বলের তখন ফেভারিট বলতে কোনো শব্দ হয়তো নেই। দুটি প্রস্তুতি ম্যাচের পর স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে হার দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করায় এই আলোচনার জন্ম দিয়েছে বেশ জোরালোভাবেই।

ওমানকেও হালকা ভাবে নেওয়ার কোনো উপায় নেই। বেশকিছু বিষয় কাজ করছে তাদের পক্ষে। একে তো স্বাগতিক দল আবার বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু করেছে পাপুয়া নিউ গিনিকে ১০ উইকেটে উড়িয়ে। তাদের সমীহ করছেন বাংলাদেশ কোচও। তবে এটাও জানিয়ে রেখেছেন ভালো খেললে বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনাই বেশি।

‘আমাদের আগামীকাল (আজ) ভালো করতে হবে। ওমান ভালো করছে। ওরাও পরের রাউন্ডে যেতে চাইবে। আমাদের জন্য কাজটা কঠিনই হবে। কিন্তু ছেলেরা জানে যে ওরা যদি ভালো খেলাটা খেলতে পারে, তাহলে আমাদের জেতার সম্ভাবনাই বেশি। কোচ হিসেবে আমি কোনো দলকেই ছোট করে দেখি না। এটাই কোচদের বৈশিষ্ট্য।‘

মাসকটের আল আমিরাত ক্রিকেট গ্রাউন্ডে স্কটিশদের বিপক্ষে প্রবাসীদের জোয়ারে গ্যালারিতে উঠেছিল লাল সবুজের ঢেউ। একই দৃশ্য দেখা যাবে আজও। এতে কোনো সন্দেহ নেই। ওমানিদের ক্রিকেট নিয়ে খুব একটা আগ্রহ না থাকলেও এই ম্যাচে স্থানীয় দর্শকদের মাঠে দেখা যাবে। গতকাল রাতে ওমান ক্রিকেট বোর্ড নিজেদের ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে দেয়, ‘সব টিকিট বিক্রি শেষ। গ্যালারি হাউজফুল।’

বিশ্বকাপ স্কোয়াডে থাকা ১৬ সদস্যের মধ্যে একজন ছাড়া বাকিদের জন্ম ভারত ও পাকিস্তানে। একমাত্র সুফিয়ান মেহমুদের জন্ম ওমানে, তিনি দেশটির বয়সভিত্তিক দলে খেলে উঠে এসেছেন জাতীয় দলে। তাই ওমান দলকে এক কথায় ‘ভাড়াটে’ দল বললেও ভুল হবে না। যদি তারা নাগরিকত্ব পেয়ে এখন ওমানের পতাকা উড়াচ্ছেন।

বাংলাদেশ একাদশে এক পরিবর্তন নিশ্চিত। ওপেনার সৌম্য সরকারের পরিবর্তে মোহাম্মদ নাঈমকে দেখা যাবে। পেস আক্রমণেও দেখা যেতে পারে ভিন্নতা। তাসকিন আহমেদের পরিবর্তে দেখা যেতে পারে শরিফুল ইসলামকে। আর বাংলাদেশ যদি এক পেসার কম খেলায় তাহলে একাদশে আসতে পারেন নাসুম আহমেদ।

এ ছাড়া ব্যাটিং অর্ডারে আসতে পারে পরিবর্তন। ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী নামানো হতে পারে ব্যাটসম্যানদের। এই ইঙ্গিত দিয়েছেন খোদ ডমিঙ্গো, ‘আমি ক্রিজে বাঁহাতি ও ডানহাতির সমন্বয় দেখতে পছন্দ করি। সবসময়ই যেন ভিন্ন ভিন্ন দুজন ব্যাটসম্যান ক্রিজে থাকে, সেই চেষ্টা করি। এ নিয়ে গভীরভাবে আলোচনাও করেছি। আমরা ছোট খাটো পরিবর্তনও আনতে পারি। এক-দুই জায়গা হয়তো এদিক ওদিক হবে। শেষ দুটি সিরিজেও দেখেছেন আমরা কিভাবে ব্যাটিং অর্ডার সাজিয়েছি। আমরা এক্ষেত্রে খুবই নমনীয় থাকতে চাই। ম্যাচের অবস্থা অনুযায়ী ব্যাটসম্যান পাঠাতে চাই।’

এর আগে ওমানের বিপক্ষে একটি ম্যাচ খেলেছিল বাংলাদেশ। ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেই ম্যাচে বাংলাদেশ তাদের স্রেফ উড়িয়ে দিয়েছিল। তবে এবার প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে দলটি। স্বাগতিক বলেই কন্ডিশন তাদের পক্ষে। আর পাঁচ বছর আগের সেই দল আর এই দলের পার্থক্যও অনেক। দিনে দিনে তারা পরিণত হয়েছেন। আল আমিরাতে ওমান ১১টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছে তার মধ্যে ৭টিতেই জয় পেয়েছে।

বিশ্বকাপে টিকে থাকতে হলে বাংলাদেশের এই ম্যাচে জয় চাই-ই। না হয় মাসকট থেকেই ধরতে হবে দেশের বিমান। মাহমুদউল্লাহদের সামনে অগ্নিপরীক্ষা, সেই পরীক্ষায় পাস করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশ কি পারবে সুলতানাতের মাটিতে ‘ভাড়াটে’ সুলতানদের হারাতে? বাংলাদেশকে যে পারতেই হবে!