শুক্র. এপ্রিল 19th, 2024

মিরপুরে করোনায় মৃত্যুতে আতঙ্কে এলাকাবাসী

নিউজ ডেস্ক:
ঢাকার মিরপুরে গত শনিবার এক ব্যক্তি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়ার পর, তার আবাসস্থল মিরপুর উত্তর টোলারবাগে জনমনে এখন এক ধরণের আতঙ্ক বিরাজ করছে। গতকাল রবিবার ওই ব্যাক্তির ঘনিষ্ঠ এমন একজনের মৃত্যুর পর এ আতঙ্ক আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এই ব্যাক্তি করোনায় আক্রান্ত ছিল কিনা তা নিশ্চিত করা হয়নি সরকারের পক্ষ থেকে। এছাড়াও করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া বৃদ্ধকে প্রাথমিক চিকিৎসা দানকরী চিকিৎসকও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে ওই ব্যক্তি আক্রান্ত অবস্থাতেই বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ানোয়, স্থানীয় বাসিন্দারা আশঙ্কা করছেন যে, এই ভাইরাস ইতোমধ্যে আশেপাশে ছড়িয়ে যেতে পারে। এমন অবস্থায় খুব প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হচ্ছেন না কেউ।

টোলারবাগের এক বাসিন্দা জানান, করোনাভাইরাসের ভয়ে আমরা এমনিতেই কম বের হতাম কিন্তু এই মৃত্যুর কারণে পুরো এলাকাই মনে হচ্ছে যেন স্তব্ধ হয়ে গেছে। রাস্তাঘাটে তেমন লোকজন নেই। সবাই এক ধরণের গৃহবন্দি। বাড়ির কাজের লোকদেরও আসতে মানা করা হয়েছে। আমাদের ধারণা ওই ব্যক্তির মাধ্যমে এই ভাইরাস হয়তো অনেকটাই ছড়িয়ে পড়েছে।

তবে গণমাধ্যমে নয়তলা ওই ভবনটি লকডাউনের খবর প্রকাশ হলেও সেটি সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন মিরপুরের উপ-কমিশনার মোস্তাক আহমেদ। তিনি বলেছেন, শুধুমাত্র আক্রান্ত ব্যক্তির পরিবারকে ওই ভবনে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। এবং ভবনের বাকি সদস্যদের সতর্কতার সাথে চলাফেরার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

এদিকে ফ্ল্যাট মালিকরা পুলিশ, আইইডিসিআর ও সিটি কর্পোরেশনের নির্দেশনায় ভেতরে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করছে বলে জানান তিনি। বলেন- করোনায় আক্রান্ত রোগীর পরিবারকেই শুধু কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। আর অফিশিয়ালি কোন ভবন লকডাউন করা হয়নি। ভবনের বাসিন্দারা তাদের নিরাপত্তার জন্যই চলাচল সীমিত করেছেন। আমরা বলছি তারা যেন মাস্ক পরে, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়ে বের হন।

আক্রান্ত ব্যক্তি মিরপুরে যে বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিলেন, সেখানকার চিকিৎসক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও আতঙ্কের মধ্যে আছেন। ইতোমধ্যে একজন চিকিৎসকের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে বলে জানা গেছে। রবিবার রাতে চিকিৎসকের পারিবারিক বন্ধু ডা. শরীফ বাংলা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তবে ওই চিকিৎসক আগের চেয়ে ভালো আছেন বলে জানা গেছে। ওই আক্রান্ত চিকিৎসক বলেন, ‘আমি এখন ভালো আছি। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন।’

ওই চিকিৎসকের পারিবারিক বন্ধু ডা. শরীফ বাংলা বলেন, ‘যে বৃদ্ধ মারা গেছেন তার চিকিৎসা দিয়েছেন আক্রান্ত ডাক্তার। গতকাল (শনিবার) সকাল থেকেই তার সমস্যা শুরু হয়েছিল। আজ (রবিবার) দুপুর নাগাদ শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। এরপর তাকে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে নেয়া হয়। চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তিনি আপাতত ভালো আছেন। তাকে এখন হাসপাতালের আইসোলেশনে রাখা হয়েছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা জানান, “যখন পরীক্ষায় জানা যায় যে ওই রোগী করোনা পজিটিভ তখন তো পুরা হাসপাতালেই একটা উদ্বেগজনক অবস্থা। এজন্য আমরা সম্মিলিতভাবে কর্মবিরতিতে গিয়েছি। আমি তো এখনও জানি না, আমি বা আমার সহকর্মীদের কেউ সংক্রমিত হয়েছেন কিনা। তো স্বাভাবিকভাবেই ভীষণ উদ্বেগের মধ্যে আছি।”

যে ব্যক্তি মারা গেছেন, তিনি কার কাছ থেকে ভাইরাসটি বহন করেছিলেন, সেটি এখনও চিহ্নিত করা যায়নি। তবে উপযুক্ত প্রমাণ ছাড়া তার এই সংক্রমণকে এখনই কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বলতে চাইছে না আইইডিসিআর। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেছেন, বর্তমানে তারা ওই ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের নমুনা পরীক্ষা করে সংক্রমণের কারণ জানার চেষ্টা করছেন।

অপরদিকে গতকাল রবিবার মারা যাওয়া ব্যাক্তির পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, রবিবার বিকেলে কুর্মিটোলা হাসপাতাল থেকে জানানো হয় তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। টোলারবাগের যে ব্যক্তি গতকাল শনিবার রাতে মারা গেছেন, তাঁর সঙ্গে আজ যিনি মারা গেছেন তাঁর ঘনিষ্ঠতা ছিল। তিনি থাকতেন তাঁদের পাশের ভবনে।

মৃত ব্যক্তির স্বজনেরা জানান, ওই ব্যক্তির দুদিন ধরে কাশি হচ্ছিল। খাওয়ার রুচি চলে গিয়েছিল। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে শনিবার তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়। ওখানে কিছু নমুনা সংগ্রহের পর চিকিৎসকেরা বাসায় পাঠিয়ে দেন। সকালে আইইডিসিআর তাঁর নমুনা সংগ্রহ করে। আজ বিকেল থেকে তাঁর শরীর আবার খারাপ হতে থাকে। একপর্যায়ে শ্বাসকষ্টে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। অ্যাম্বুলেন্স ডাকার পর রোগীর উপসর্গ শুনে অ্যাম্বুলেন্সচালক তাঁকে হাসপাতালে নিতে অস্বীকৃতি জানান। পরে তাঁরা আরেকটি অ্যাম্বুলেন্স ডেকে কুর্মিটোলায় যান। চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত ব্যক্তি সায়েন্স ল্যাবরেটরির সাবেক কর্মকর্তা।