বৃহস্পতি. এপ্রিল 25th, 2024

রংপুর অঞ্চলে আমনের আবাদ বেড়েছে প্রায় ৫ হেক্টর জমিতে

স্টাফ রির্পোটার: সোনালী ধানে ছেয়ে গেছে মাঠের পর মাঠ। এখন চলছে ধান কাটা, মাড়াই ও শুকানোর কাজ। আমন ধানে লাভবান হবার স্বপ্নে রঙ লেগেছে কৃষকের মনে। তবে দু’দফার বন্যার প্রভাবে অর্জিত হয়নি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা। এবার রংপুর অঞ্চলে ৬ লাখ ৩৫ হাজার ৪০৪ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এরমধ্যে রোপন করা হয়েছে ৬ লাখ ৮ হাজার ৮৫২ হেক্টর জমি। যা শতকরা হিসেবে ৯৫ দশমিক ৮২ শতাংশ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র বলছে- এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকলেও দু’দফার বন্যার কারণে রোপা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা পুরোপুরি অর্জিত হয়নি। তবে গত বছরের চেয়ে এবার ৪ হাজার ৯০২ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের আবাদ বেড়েছে। এরমধ্যে ২ লাখ ১২ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমির ধান কর্তন করা হয়েছে। রংপুর কৃষি অঞ্চলের পাঁচ জেলা রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নীলফামারী ও লালমনিরহাটে এবার আমন মৌসুমে স্থানীয়সহ হাইব্রিড ও উফশী ধান রোপন করেছে কৃষকরা। এরমধ্যে রংপুর জেলায় ১ লাখ ৭৬ হাজার ৭৪১ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও রোপন হয়েছে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমি। গাইবান্ধায় লক্ষ্যমাত্রা চেয়ে বেশি রোপন হয়েছে। এ জেলায় ১ লাখ ২৩ হাজার ৬৭ হেক্টর জমির রোপন লক্ষ্যমাত্রার জন্য নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু রোপন হয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ৭৯০ হেক্টর জমি। যা শতকরা ১’শ ২ দশমিক ২১ শতাংশ।

অন্যদিকে কুড়িগ্রাম জেলাতে ১ লাখ ২২ হাজার ১৫৯ হেক্টর জমির মধ্যে ১ লাখ ১৯ হাজার ৩০৫ হেক্টর জমিতে রোপন করা হয়। লালমনিরহাট জেলার ৯০ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে আমন রোপনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও রোপন করা হয়েছে ৮৫ হাজার ২৯০ হেক্টর জমি। এছাড়া নীলফামারীতে ১ লাখ ২৩ হাজার ৩৭ হেক্টর জমির মধ্যে ১ লাখ ১২ হাজার ৬৬২ হেক্টর জমি চাষাবাদ করা হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুর অঞ্চল সূত্র মতে, রোপন করা ৬ লাখ ৮ হাজার ৮৫২ হেক্টর জমি থেকে ইতোমধ্যে (২২ নভেম্বর পর্যন্ত) ২ লাখ ১২ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমির ধান কর্তন করা হয়েছে। যার মধ্যে রংপুর জেলায় ৬৬ হাজার ৭৪৫ হেক্টর, গাইবান্ধায় ১০ হাজার ২০০ হেক্টর, কুড়িগ্রাম জেলায় ২৪ হাজার ৯৫৪ হেক্টর ও লালমনিরহাটে ৪২ হাজার ৬৪৫ হেক্টর এবং নীলফামারী জেলাতে ৬৮ হাজার ১৮৬ হেক্টর জমির ধান কর্তন করা হয়েছে।

এদিকে আমন মৌসুমে ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হলেও পুরনো ধানের দাম বৃদ্ধি না পাওয়ায় হাসির আড়ালে দুশ্চিন্তা তাড়া করছে কৃষকদের। গত বোরো মৌসুমে ধানের দাম কম থাকায় অনেক কৃষকই ধান বিক্রি করতে পারেনি। আমন মৌসুমে শেষের দিকে ওই ধান বেশি দামে বিক্রির আশায় গুড়েবালি পড়েছে।

নীলফামারীর ডোমার এলাকার কৃষক আব্দুল গাফফার জানান, তার ২৭ একর জমিতে আবাদ করা আমনের অর্ধেক জমি থেকে ধান কর্তন করেছে। সেগুলো মাড়াই ও শুকানো হচ্ছে। বাকি ধান কেটে রাখার জায়গা সংকুলান না হওয়ায় চিন্তিত রয়েছেন। এই কৃষকের অভিযোগ, গত বোরো মৌসুমে ফেলে রাখা ধান ৫ মাস পরও ৪’শ থেকে সাড়ে ৪’শ টাকা মন দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে করে দীর্ঘদিন গোলায় ধান পড়ে থাকার ফলে মন প্রতি ৫ থেকে ৭ কেজি করে ধান ঘাটতি পড়ছে। তারমধ্যে আমন মৌসুমে ধান কাটা, মাড়াই ও শুকানোর পর বিক্রি করতে গিয়ে ন্যায্য মূল্যে পাওয়া নিয়ে সন্দিহান তিনি।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. মো. মোস্তাফিজার রহমান প্রধান জানান, এখনো পুরোপুরিভাবে আমনের কাটা মাড়াই শেষ হয়নি। আশা করা হচ্ছে সরকারিভাবে ধান ক্রয় শুরু হওয়ায় এবার ধানের দাম কিছুটা বাড়বে।

অন্যদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুর অঞ্চলের উদ্যান বিশেষজ্ঞ কৃষিবিদ খোন্দকার মো. মেসবাহুল ইসলাম বলেন, আমন মৌসুমে আবাদের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল, তা পুরোপুরি অর্জন সম্ভব না হলেও উৎপাদন অনেক ভালো হয়েছে। এখন সবখানেই কৃষকরা ধান কাটা-মাড়াই নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে।

এবার রংপুর অঞ্চলে আমন রোপন করা জমি থেকে ১৮ লাখ ৮ হাজার ৬৪৭ মেট্রিন টন চাল উৎপাদন হবে। ইতোমধ্যে ২ লাখ ১২ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। এখনো ৩ লাখ ৯৬ হাজার ১২২ হেক্টর জমির ধান কাটা বাকি হয়নি বলেও তিনি জানান।