বৃহস্পতি. এপ্রিল 18th, 2024

শ্রীলংকায় ফের সোস্যাল মিডিয়া বন্ধ

ইস্টার সানডের দিনে সন্ত্রাসী হামলার পর শ্রীলংকার বেশ কয়েকটি শহরে মুসলিমবিদ্বেষী সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল দেশটিতে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন মেসেজিং ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সাময়িক বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। খবর রয়টার্স, এএফপি।

প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, গত রোববার পশ্চিম উপকূলের খ্রিস্টান অধ্যুষিত চিলাউ শহরে একটি মসজিদ, মুসলিম মালিকানাধীন একটি দোকান এবং একজন মুসলিমের ওপর হামলা করা হয়। একটি মোটরবাইক গ্যাংসহ প্রায় অর্ধশত মানুষ মসজিদ ও দোকানে পাথর ছোড়ে এবং ভাঙচুর চালায়। পাশাপাশি এক মুসলিমকে পিটিয়ে আহত করা হয়। দোকানমালিকের একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে এ হামলার ঘটনা ঘটে। রাত্রিকালীন কারফিউয়ের মধ্যেই এভাবে দোকান ও মসজিদে হামলার ঘটনা ঘটল। এ ঘটনায় চারজনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আবদুল হামিদ মোহাম্মদ হাশমার (৩৮) নামে ওই পোস্টদাতাকে আটক করা হয়েছে। ফেসবুকে তার পোস্টটি ছিল, ‘বেশি হেসো না, একদিন তোমাকে কাঁদতে হবে’। স্থানীয় খ্রিস্টানরা এ বক্তব্যকে হুমকি মনে করে উত্তেজিত হয়ে হামলা করে।

আরেকটি সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, রোববার বিকালে এবং গতকাল সকালে মুসলিম মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার অভিযোগে বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। কুরুনেগালা জেলার কাছাকাছি এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়।

সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র সুমিত আতাপাত্তু জানিয়েছেন, বিশেষ করে বৌদ্ধ অধ্যুষিত এলাকার বাসিন্দারা আটক ওই লোকদের মুক্তি দাবি করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাতের বেলা পুলিশ-কারফিউ জারি রাখা হয়েছে।

পুলিশের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, গতকাল থেকে চিলাউ ও এর আশপাশের এলাকায় কারফিউ শিথিল করা হয়েছে। তবে সম্ভাব্য সহিংসতা ঠেকাতে আগাম সতর্কতা হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সাময়িক ব্লক করা হয়েছে।

এদিকে শ্রীলংকার মুসলিম কাউন্সিল অল সিলন জমিয়াতুল উলামার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দেশজুড়ে বেশ কয়েকটি মসজিদ ও মুসলিমদের বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি।

তিন সপ্তাহ আগে শ্রীলংকায় চারটি হোটেল ও তিনটি গির্জায় আত্মঘাতী বোমা হামলায় ২৫৩ জনের প্রাণহানি ঘটে। পরে এ হামলার দায় স্বীকার করে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আইএস। ঘটনার পর ২ কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্রটির সংখ্যালঘু মুসলিমরা পাল্টা আক্রমণের আতঙ্কে ভুগছেন। নানা স্থানেই হামলার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এক সপ্তাহ পরেই খ্রিস্টান অধ্যুষিত নেগোম্বোতে সবচেয়ে বড় সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এ সময় মুসলিম ও খ্রিস্টানদের মধ্যে সহিংসতায় বেশ কয়েকজন আহত হন। ইস্টার সানডের হামলায় এ শহরের গির্জা ছিল অন্যতম লক্ষ্য।

শ্রীলংকা সরকারের তথ্য বিভাগের মহাপরিচালক নালাকা কালুয়েওয়া গতকাল বলেছেন, দেশে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে ফের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সাময়িকভাবে ব্লক করা হয়েছে।

শ্রীলংকার প্রধান মোবাইল অপারেটর ডায়ালগ এক টুইটে বলেছে, পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত ভাইবার, ইমো, স্ন্যাপচ্যাট, ইনস্টাগ্রাম ও ইউটিউব বন্ধ রাখার সরকারি নির্দেশনা তারা পেয়েছে।

এদিকে শ্রীলংকার সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলতে শুরু করেছে। তবে শিক্ষার্থী উপস্থিতি খুবই কম বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। গত সপ্তাহেই মাধ্যমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পাঠদান শুরু হয়েছে। তবে প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছে গতকাল। বেসরকারি ক্যাথলিক বিদ্যালয়গুলো খুলবে আজ থেকে। তবে অভিভাবকরা আগামী সপ্তাহের আগে শিশুদের স্কুলে যেতে দিতে নারাজ।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।