বৃহস্পতি. এপ্রিল 18th, 2024

‘হোল গ্রেইন্স’ বলতে যা বোঝায়

বাজার করতে গিয়ে বিভিন্ন উপকরণের গায়ে ‘হোল গ্রেইন্স’ বা সম্পূর্ণ শস্যজাতীয় খাবার নিশ্চয়ই চোখে পড়েছে। স্বাস্থ্য সচেতনদের কাছ থেকে জানতে পেরেছেন ‘হোল গ্রেইন্স’ স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, হয়ত খাওয়াও শুরু করেছেন।

তবে এই খাদ্যশস্য সম্পর্কে হয়ত অনেকেই সচেতন নয়। জানা নেই কেনো এত স্বাস্থ্যকর? অন্যান্য শস্যের সঙ্গে এর তফাৎটা কোথায়?

খাদ্য ও পুষ্টিবিষয়ক ওয়েবসাইটে এই সম্পর্কে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে ‘হোল গ্রেইন্স’ বিষয়ে পরিচিতি তুলে ধরা হল।

একটি শস্যের বীজে যতটুকু পুষ্টিকর উপাদান থাকে তার সবটুকুই মেলে ‘হোল গ্রেইন্স’ থেকে। সবটুকু পুষ্টিকর উপাদান পাওয়ার কারণ হল শস্যের বীজের অঙ্কুরোদগমের উপাদান, তুষ এবং ‘এন্ডোস্পার্ম’ (গর্ভাধানের সময় প্রায় অধিকাংশ ফুলের গাছের বীজের মধ্যে উত্পাদিত টিস্যু। এটি ভ্রূণকে ঘিরে এবং স্টার্চের আকারে পুষ্টি প্রদান করে, যদিও এটি তেল এবং প্রোটিনও থাকতে পারে। এটি মানবদেহের পুষ্টি বিষয়ক উৎস) বা সবকিছুই এখানে উপস্থিত থাকে।

শস্যের তুষ ও অঙ্কুরোদগমের উপাদান ত্বক এবং চুলে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল রাখে। কার্বোহাইড্রেইট, ভোজ্য আঁশ এবং প্রোটিনের পরিপূর্ণ উৎস এই ‘হোল গ্রেইন্স’।

নিয়মিত খাওয়ায় হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং কয়েক ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় ‘হোল গ্রেইন্স’ ধরনের খাবার। ‘হোল ব্র্যান’, ‘মাল্টি গ্রেইন্স’, ‘ক্র্যাকড’, ‘স্টোন-গ্রাউন্ড’ ইত্যাদি ‘হোল গ্রেইন্স’ হিসেবে পরিচিত হলেও আসলে তা নয়। বরং এগুলো প্রক্রিয়াজাত এবং শস্যের কোনো না কোনো পুষ্টি উপাদান এগুলোতে থাকে না। কিছু বহুল ব্যবহৃত ‘হোল গ্রেইন্স’ নিচে উল্লেখ করা হল।

গম: ‘হোল হুইট’ এমন একটি শস্য যেখানে গমের দানা তার প্রাকৃতিক অবস্থায় সংগ্রহ করা হয় এবং খোসা ছাড়ানো হয় না। প্যাকেটজাত গম কেনার সময় প্যাকেটের গায়ে শুধু ‘হুইট’ নয়, ‘হোল হুইট’ লেখা দেখে নিতে হবে যাতে গমের সর্বোচ্চ পুষ্টিগুণ নিতে পারেন।

কাওন: নানান স্বাস্থ্যগুণে ভরপুর এই শস্য। এতে ‘গ্লুটেন’ নেই, আছে প্রচুর পরিমাণে ভোজ্য আঁশ যা গমের তুলনায় প্রায় তিনগুন বেশি। সংক্রামক রোগ, হৃদরোগ, কোলেস্টেরল, কয়েক ধরনের ক্যান্সার ইত্যাদির ঝুঁকি কমায় কাওন। পাশাপাশি হজমেও সহায়ক।

ভুট্টা: এই শস্যের সঙ্গে সবাই পরিচিত। কয়েকটি দেশের মানুষের খাদ্যাভ্যাসে বহুল ব্যবহৃত উপাদান। প্রাকৃতিকভাবেই এতে কোনো ‘গ্লুটেন’ নেই। কয়েক ধরনের ভিটামিন, খনিজ ও ‘অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট’য়ের আদর্শ উৎস ভুট্টা।

বার্লি: ‘হোল বার্লি’ অনেকসময় ‘হাল্ড বার্লি’ নামেও বিক্রি হয়। ভিটামিন, খনিজ ও ভোজ্য আঁশের প্রাচুর্য রয়েছে এই শষ্যে। এই শস্য প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় শুধু এর বাহ্যিক খোসা ছাড়ানো হয়, যা খাওয়া অযোগ্য। তবে শস্যের অন্যান্য অংশে পরিবর্তন আনা হয়না।

‘বাকহুইট’: বাংলায় বাজরা নামে পরিচিত। অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে ‘ম্যাঙ্গানিজ’ থাকে এই শষ্যে যা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। ঋতুস্রাব পরবর্তী শারীরিক সমস্যা, হজমের সমস্যা দূর করতে উপকারী ‘বাকহুইট’। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণেও এটি বেশ কার্যকর।

ওটস: এই শস্যের স্বাস্থ্যগুণ সম্পর্কে বেশিরভাগ মানুষই জ্ঞাত। পুষ্টি উপাদানের দিক থেকে খাওয়ার যোগ্য শস্যের মধ্যে এটি অন্যতম। প্রাকৃতিক এটিও ‘গ্লুটেন’ মু্ক্ত রেখেছে। এবং আরও মেলে ‘অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট’, ভোজ্য আঁশ, খনিজ ও ভিটামিন।

রাই: পুষ্টিগুণ আর ভোজ্য আঁশের দিক থেকে সবচাইতে এগিয়ে আছে এই শস্য। জাতের দিক থেকে এটি গম ঘরানার। এই শস্যটি অবশ্যই ‘হোল রাই’ অবস্থায় খেতে হবে।

মিলেট: বাংলায় বলে বজরা, জনারি বা জওয়ার। এতে মেলে আঁশ ও অসংখ্য ‘মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট’। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে এবং সংক্রামক রোগ থেকে বাঁচাতে বিশেষ কার্যকর।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।