শুক্র. মার্চ 29th, 2024

২৮ বছর অপেক্ষার পর স্বামীর দেখা

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি :

স্ত্রীর সঙ্গে অভিমান করে বাড়ি ছেড়েছিলেন জহুর উদ্দিন ওরফে বাচ্চু ম-ল। অপেক্ষায় থাকা জাহেদা বেগম ২৮ বছর পর অবেশেষে স্বামীর দেখা পেয়েছেন। ৩৬ বছর বয়সে জহুর উদ্দিন কুড়িগ্রামের সদর উপজেলার পলাশপুর থেকে গিয়েছিলেন যশোরের অভয়নগরে সুন্দলী ইউনিয়নে। সেখানে গিয়ে বাচ্চু ম-ল নামে পরিচিত পান। সেই নামেই কেটেছে তার ২৮টি বছর। স্বামী জহুর উদ্দিন ফিরে আসার আনন্দে আপ্লুত জাহেদা বেগম। তিনি বলেন, স্বামী নিখোঁজ হওয়ার পর ২৮ বছর ধরে একমাত্র সন্তানকে নিয়ে ভিক্ষাসহ অন্যের বাড়িতে কাজ করে ছেলেকে মানুষ করেছি। ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে বিয়ে করিনি, আশায় ছিলাম ছেলের বাবা ফিরে আসবে। তিনি আরও বলেন, মানুষটার রাগ খুব, বুদ্ধি-সুদ্ধিও একটু কম। এত দিন পর তিনি বাড়িতে ফিরে আসায় যে আনন্দ লেগেছে, তা বোঝাতে পারব না। বাড়ি ফেরার পর জহুর উদ্দিন ওরফে বাচ্চু বলেন, স্ত্রীর সঙ্গে অভিমান করে ৩৬ বছর বয়সে বাড়ি ছেড়ে চলে যান যশোরের অভয়নগর উপজেলার সুন্দলী ইউনিয়নের গোবিন্দুপর গ্রামে। সেখানে কিছুদিন কাটানোর পর গোবিন্দপুরের মৃত মকন্দ মল্লিকের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিয়ে কাটিয়ে দেন বেশ কয়েক বছর।

তিনি আরও বলেন, সেখানে সবার সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠায় তার আশ্রয় মেলে সুন্দলী ইউনিয়ন পরিষদের দোতলার একটি কক্ষে। চাকরি না হলেও পরিষদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা থেকে শুরু করে সার্বিক দেখাশোনার কাজ করে সেখানেই তার কেটে যায় দীর্ঘ বছর। পলাশবাড়ি গ্রামের প্রতিবেশী ইউসুফ আলী বলেন, জহুর উদ্দিনের দীর্ঘদিন কোনো খোঁজখবর না পাওয়ায় আমরা গ্রামবাসীরা ভেবেছিলাম, তিনি হয়তো মারা গেছেন। নিরুদ্দেশের দীর্ঘ ২৮ বছর পর তিনি নিজ এলাকায় ফিরে আসায় প্রতিবেশী ও তার পরিবারের মানুষ সবাই খুব খুশি ও আনন্দিত। জরুর উদ্দিনের ভাতিজা গাড়িচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, আমার চাচা ফিরে আসবে, আমরা কখনই ভাবতে পারিনি। অনেক খোঁজ করে না পেয়ে তার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম।

কুড়িগ্রাম পৌরসভার পলাশবাড়ী গ্রামের কৃষক জহুর উদ্দিন ওরফে বাচ্চু ১৯৯১ সালে পাশের কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের আগমনী গ্রামে বিয়ে করেন জাহেদা বেগমকে। বিয়ের পর থেকে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা না হওয়ায় ৬ মাসের শিশু সন্তান জাহিদুল ইসলামকে রেখে নিরুদ্দেশ হয়ে ফিরে আসেন প্রায় ৩ বছরের মাথায়। সংসারে তুচ্ছ নিয়ে আবার অভিমান করে আবার নিরুদ্দেশ হন জহুর উদ্দিন। পরিবারের সদস্যরা অনেক খোঁজাখুজির পরও তার সন্ধান পায়নি। এবার ২৮ বছর পর তিনি ফিরে এসেছেন। ৩০ সেপ্টেম্বর প্রথমবার কুড়িগ্রামের বাসায় ফিরে আসেন তিনি। এরপর ভাতিজাকে নিয়ে আবার যান যশোরের অভয়নগরে। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অভয়নগরের সুন্দলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিকাশ রায় কপিলের মধ্যস্থতায় ইউপি সদস্য, সাংবাদিক ও সুধীজনদের উপস্থিতিতে পরিবারের কাছে জহুর উদ্দিন বাচ্চু ম-লকে তুলে দেওয়া হয়।