শুক্র. ডিসে. 13th, 2024

পুলিশ সদস্যদেরকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিজ নিজ ইউনিটে যোগ দেওয়ার নির্দেশ

ভেঙে পড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে পুলিশ সদস্যদের স্ব স্ব ইউনিটে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশের নবনিযুক্ত মহাপরিদর্শক মো. ময়নুল ইসলাম।

দেশের চলমান পরিস্থিতির জন্য বাহিনীর কিছু ‘উচ্চাভিলাষী, অপেশাদার’ কর্মকর্তার সিদ্ধান্তকে দায়ী করে তাদের বিরুদ্ধে ‘আইনি ব্যবস্থা নেওয়ারও’ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।

বুধবার দায়িত্ব নেওয়ার পর পুলিশ সদর দপ্তরে প্রথম সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছিলেন আইজিপি ময়নুল ইসলাম।

শেখ হাসিনার সময় দায়িত্ব পাওয়া আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে চাকরি থেকে সরিয়ে মো. ময়নুল ইসলামকে পুলিশের নেতৃত্বে আনার প্রজ্ঞাপন জারি হয় মঙ্গলবার রাতে।

প্রবল গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যখন ভেঙে পড়েছে, ঠিক তখন পুলিশের শীর্ষ এই পদে পরিবর্তন আনা হয়।

পুলিশের ক্ষমতা হস্তান্তরের কিছু আনুষ্ঠানিকতা থাকলেও এবার সেসবের কিছু হয়নি। বিদায়ী আইজিপি নবনিযুক্ত আইজিপির কাছে দায়িত্বও আনুষ্ঠানিকভাবেও হস্তান্তর করেননি।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সোমবার বিকালের পর থেকেই নগরীতে প্রকাশ্যে পুলিশের সংখ্যা কমতে থাকে; মঙ্গলবার শুধু রাজধানীতে নয় প্রায় পুরো দেশেই পুলিশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে দেখা যায়।

এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের সড়কে নেমে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা যায়। পরে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ও থানার নিরাপত্তায় আনসার নামানো হয়।

‘একটি শূন্যস্থান হয়তো তৈরি হয়েছে’ মন্তব্য করে আইজিপি ময়নুল ইসলাম বলেন, “তবে সেটি পূরণে আমরা কাজ শুরু করেছি। আশা করছি অচিরেই এই পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে।”

পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সবার সহযোগিতা আহ্বান করেন তিনি। থানাগুলোকে ঠিকঠাক করতে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, সচেতন মানুষ, সাংবাদিকসহ সাধারণ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে একটি নাগরিক নিরাপত্তা কমিটি করার নির্দেশ দেন আইজিপি।

এছাড়া তিনি সামাজিক মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদেরকে ব্যক্তিগত বা অ্যাসোসিয়েশনের নামে কোনো ধরনের বিবৃতি, ব্যাজের ছবি বা কোনো ধরনের মন্তব্য করতেও নিষেধ করেছেন ময়নুল ইসলাম।

এর আগে যেকোনো ধরনের অরাজকতা ও লুটতরাজ বন্ধে ময়নুল ইসলামকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ময়নুল ইসলাম বুধবার বঙ্গভবনে সাক্ষাৎ করতে গেলে রাষ্ট্রপতি এ নির্দেশ দেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার পর থেকেই দেশজুড়ে থানাসহ পুলিশের স্থাপনাগুলোতে একের পর এক হামলা হতে থাকে। নির্বিচারে আক্রমণ হতে থাকে থানায়, ভাঙচুর ও লুটপাটও করা হয় অনেক থানায়।

এসব হামলায় বহুসংখ্যক পুলিশ হতাহত হলে অন্যরা নিরাপদে সরে যেতে থাকেন। এতে করে এমন নজিরবিহীন অবস্থা তৈরি হয়েছ বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

জীবন বাঁচাতে আত্মগোপন করেছেন পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারাসহ বেশিরভাগ সদস্য। যে কারণে মঙ্গলবার সকাল থেকে থানাগুলো ছিল পুলিশ শূন্য ও অরক্ষিত। থানায় ফিরতে জীবনের নিরাপত্তা চাইছেন পুলিশ সদস্যরা। এই দাবিতে কর্মবিরতির ডাকও দিয়েছেন তারা।

ঢাকায় অরক্ষিত হয়ে পড়া অনেক থানায় মঙ্গলবার অবাধে ঢুকে ঘুরিয়ে বেড়িয়েছেন অনেকে। বিভিন্ন কক্ষে থাকা বিভিন্ন জিনিসপত্র থেকে যার যা ইচ্ছে নিয়ে গেছেন যাচ্ছেন।

ঢাকাসহ দেশের যেসব থানায় হামলা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে যেগুলোতে আগুন দেওয়া হয়নি সেগুলো ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট চালানো হয়।

এমন অবস্থার জন্য যাদের কারণে পুলিশের এ অবস্থা তাদের বিষয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তারা।