শনি. এপ্রিল 20th, 2024

ইইউর সহযোগিতায় কক্সবাজারে ১ কোটি ৮০ লাখ ইউরোর প্রকল্প ইউনিসেফের

পুষ্টি, বিশুদ্ধ পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ও পরিচ্ছন্নতা, শিক্ষা ও শিশু সুরক্ষায় ইউনিসেফের তিন বছর মেয়াদি এই প্রকল্পের আওতায় দুই লাখ ৮৮ হাজারের বেশি শিশু ও পরিবার সুবিধাপ্রাপ্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশে ইউনিসেফের নতুন আবাসিক প্রতিনিধি তোমু হোজুমি বলেন, “ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগিতার কারণে আমরা রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি শিশু, কিশোর-কিশোরী ও তাদের পরিবারগুলোকে বৈরী পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেওয়ার সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সমন্বিত ও পরিপূর্ণ সেবা দিতে পারছি, যা আরও ফলপ্রসূ হবে।

“গত দেড় বছরে আমরা পর্যাপ্ত পরিমাণে মানবিক সহায়তা বাড়িয়েছি। এর পেছনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো যেসব অংশীদার রয়েছে তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।”

এরপরেও বাংলাদেশের সবচেয়ে দরিদ্র ও দুর্যোগপ্রবণ জেলাগুলোর একটি কক্সবাজারে ১২ লাখের মতো মানুষের মানবিক সহায়তার প্রয়োজন থাকায় সেখানকার পরিস্থিতি এখনও জটিল বলে মন্তব্য করেন ইউনিসেফের আবাসিক প্রতিনিধি।

ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজারে বাসিন্দা রয়েছে ২৩ লাখ, তাদের প্রায় ৩৩ শতাংশেরই দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস।

এখানে শিক্ষার হারও কম, প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার হার ৫৫ শতাংশ। মেয়েদের অর্ধেকেরই বিয়ে হয় ১৮ বছরের আগেই এবং ৫০ হাজারের মতো শিশু শ্রমে নিযুক্ত রয়েছে।

জেলায় অপুষ্টির হারও অনেক বেশি। পুষ্টির অভাবে সেখানকার প্রতি দুটি শিশুর মধ্যে একটির খর্বকায়। ঘাটতি রয়েছে সদ্যোজাতদের সঠিকভাবে খাওয়ানো ও সেবা-যত্নেও।

এর উপর দেশের সবচেয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগপূর্ণ জেলাগুলোর একটি কক্সবাজার; ঘূর্ণিঝড়, মৌসুমি বৃষ্টিতে ভূমিধস ও বন্যা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলা করতে হয় তাদের।

বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত রেনজি টিরিংক বলেন, “রোহিঙ্গা সংকটের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত সবার একটি উন্নত ভবিষ্যৎ নিশ্চিতে আমাদের সর্বাত্মক কাজ করা দরকার। কৌশলগত এই সহায়তার মাধ্যমে আমরা রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি জনগোষ্ঠীর জন্য মানবিক সহায়তা ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখতে চাইছি।

“কক্সবাজারে বিশুদ্ধ পানি প্রাপ্তি, শিক্ষা, শিশু সুরক্ষা, খাবার ও পুষ্টি নিশ্চিতে যেসব প্রতিবন্ধকতা আছে সেগুলো আমরা মোকাবেলা করব। স্থানীয় উন্নয়ন জোরদারের মাধ্যমে ভবিষ্যতে মানবিক সহায়তার প্রয়োজনীয়তা কমানোই আমাদের লক্ষ্য।”

রোহিঙ্গা শরণার্থী ও স্থানীয় বাংলাদেশি জনগোষ্ঠীকে সহায়তার লক্ষ্যে ইউনিসেফকে এ পর্যন্ত দুই কোটি ৪৮ লাখ ইউরো দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

নতুন এই প্রকল্পের অর্ধেক কাজ করা হবে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য, বাকি অর্ধেক হবে ৭ ও ১৫ নম্বর ক্যাম্পে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের জন্য।

রাখাইন প্রদেশে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমনপীড়নের মুখে ২০১৭ সালের অগাস্ট থেকে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। এর আগে থেকে প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে ছিল।

আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার সরকার ২০১৮ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি চুক্তিতে সই করলেও এ বিষয়ে এখনও কোনো অগ্রগতি নেই।

রোহিঙ্গারা যাতে ‘স্বেচ্ছায়, নিরাপদে ও মর্যাদার’ সঙ্গে মিয়ানমারে ফিরতে পারে সে ব্যবস্থা করার আহ্বান জানিয়ে আসছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।

তিন বছর মেয়াদি এই প্রকল্প নেওয়ার পেছনে এই সময়ের মধ্যে সংকটের সুরাহা হচ্ছে না বলে তারা জেনে গেছেন কি না তা জানতে চাওয়া হয়েছিল ইইউ রাষ্ট্রদূতের কাছে।

জবাবে তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা কক্সবাজার থেকে উধাও হয়ে গেলেও এই জেলায় সহায়তা লাগবে।

“কক্মবাজার এখনও বাংলাদেশের সবচেয়ে দুর্যোগপ্রবণ ও দরিদ্র জেলাগুলোর একটি এবং এই জেলার কেউ যাতে পেছনে পড়ে না থাকে সে লক্ষ্যে এই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।”

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।