শুক্র. এপ্রিল 19th, 2024

কুকুরের তাড়ায় বোমা ফাটিয়ে মরেছেন বাগদাদি: ট্রাম্প

ছুটির দিন রোববার এক বিবৃতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, তাদের ‘স্পেশাল ফোর্সের’ অভিযানের মধ্যে বিস্ফোরকভর্তি বেল্টের বিস্ফোরণ ঘটান বাগদাদি।

অপর প্রান্ত দিয়ে বের হওয়ার সুযোগ না থাকা একটি সুড়ঙ্গের ভেতরে দৌড়ে গিয়ে মারা পড়েন বাগদাদি। যুক্তরাষ্ট্রের কুকুরগুলো তাড়া করায় ‘চিৎকার, আর্তনাদ ও কান্না করতে করতে’ যাচ্ছিলেন তিনি।

ট্রাম্পের ভাষ্যমতে, এ সময় তিন শিশু সন্তান সঙ্গে ছিল বাগদাদির, বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সবাইকে নিয়ে মারা যান তিনি।বিস্ফোরণে তার দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। পরে ডিএনএ টেস্টে তার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়।

“খুনি গুণ্ডা যে অন্যদের ভয় দেখাতে বহু চেষ্টা করেছে তারই জীবনের শেষ মুহূর্ত কেটেছে চরম আতঙ্কে, পুরোপুরি ভয় ও আতঙ্কে, তাকে আক্রমণ করা আমেরিকান বাহিনীর ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে।”

অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সৈন্য নিহত হয়নি এবং বাগদাদির বেশ কয়েকজন অনুসারী নিহত হয়েছে বলেও দাবি করেছেন ট্রাম্প।‘অতি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও জিনিসপত্র’ উদ্ধারের কথাও বলেছেন তিনি।

আইএসের শীর্ষনেতা বাগদাদির মৃত্যুর ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প বলেছেন, বিশ্ব এখন আগের চেয়ে অনেকটা নিরাপদ হয়েছে।

কথিত আরব বসন্তের ঢেউয়ে সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের পতনের লক্ষ্যে অস্ত্র হাতে নেওয়া বিদ্রোহীদের অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দেয় যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা। এরই এক পর্যায়ে সিরীয় বাহিনীর কোণঠাসা অবস্থায় দেশটির একটি বিশাল অংশ দখল করে নেয় জঙ্গিরা। পরে ইরাকেরও বড় অংশ চলে তাদের হাতে।

ইরাক ও সিরিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণে ২০১৪ সালে ‘খেলাফত’ ঘোষণা করে বিশ্বব্যাপী আলোচনায় আসেন ইসলামিক স্টেট-আইএসের নেতা বাগদাদি।

এরপর অধিকৃত এলাকায় এই জঙ্গি গোষ্ঠীর নৃশংসতার খবর প্রকাশ হয়, যাতে নিহত হন ভিন্ন মতাবলম্বী হাজার হাজার মানুষ। ইয়াজিদি নারীদের ধরে নিয়ে ‘যৌনদাসি’ বানায় তারা।

ঢাকা ও প্যারিসসহ বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহরে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পেছনে এই জঙ্গি গোষ্ঠীর নাম আসতে থাকে।

এরইমধ্যে বাশার আল আসাদকে রক্ষায় সিরিয়ায় রাশিয়ার সামিরক হস্তক্ষেপ, অপরদিকে জঙ্গিদের লক্ষ্য করে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বাহিনীর অভিযান-এই দুইয়ে ক্রমশ এলাকা হারাতে থাকে আইএস। এ বছরের শুরুর দিকেই আইএসের ‘খেলাফত’ ধ্বংসের ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।

কে এই বাগদাদি?

বিবিসির তথ্য মতে, আবু বকর আল বাগদাদির আসল নাম ছিল ইব্রাহিম আওয়াদ ইব্রাহিম আল-বদ্রি। সুশৃঙ্খল এবং যুদ্ধক্ষেত্রে কৌশলী ও নির্দয় হওয়ার কারণে গোষ্ঠীর মধ্যে সুনাম ছিল তার।

১৯৭১ সালে ইরাকের রাজধানী বাগদাদের উত্তরের সামারা শহরের কাছে জন্ম বাগদাদির। ২০০৩ সালে ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অভিযানের সময় ওই শহরের কোনো একটি মসজিদে তিনি ইমামতি করতেন বলে ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

কারও কারও মতে, সাদ্দাম হোসেনের আমলেই জিহাদি হয়ে উঠেছিলেন বাগদাদি। আবার কেউ কেউ বলেন, ইরাকের দক্ষিণাঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাম্প বুকায় আটক থাকাকালে জঙ্গিবাদে ঝুঁকিছিলেন ছিলেন তিনি। ওই ক্যাম্পে আল-কায়েদার অনেক কমান্ডারকেও আটকে রাখা হয়েছিল।     

২০১০ সালে ইরাকে আল-কায়েদাসহ বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীর মোর্চা আইএসআইএল-এর নেতা হয়ে ওঠেন বাগদাদি। পরে ২০১৪ সালে আইএস জঙ্গিরা ইরাকের মসুল শহর দখল করার পর ‘খেলাফতের’ ঘোষণা দিয়ে বিশ্বব্যাপী আলোচনায় উঠে আসেন তিনি।  

শুধু ওই ঘোষণার সময়ই প্রকাশ্যে দেখা গেছে আবু বকর আল বাগদাদিকে। এ বছরের শুরুর দিকে আইএসের প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যায় তাকে।

২০১১ সালের অক্টোবরে বাগদাদিকে ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে চিহ্নিত করে তার সংক্রান্ত তথ্যের জন্য এক কোটি ডলার পুরস্কার ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৭ সালে পুরস্কারের ওই অর্থমূল্য বাড়িয়ে আড়াই কোটি ডলার করা হয়।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।