শুক্র. মার্চ 29th, 2024

পেঁয়াজ সঙ্কটে কার কী দায়

পেঁয়াজের দাম স্থিতিশিল রাখতে শুক্রবার মিরপুর-৬ নম্বর কাঁচা বাজারে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ আদালত। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার দুই মাস ধরে একের পর পদক্ষেপ নিলেও পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি রেকর্ড আড়াইশ টাকায় উঠেছে, এর জন্য ক্রেতাদের অনেকে ব্যবসায়ীদের ‘কারসাজিকে’ দায়ী করলেও তারা বলছেন সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপের অভাব রয়েছে।  

চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ নিশ্চিত করতে সঠিক পরিকল্পনার ঘাটতি ও সময়মতো বিকল্প দেশ থেকে আমদানির উদ্যোগ না নেওয়ার কারণে পরিস্থিতি নাজুক হয়েছে বলে দাবি করছেন আমদানিকারকরা। এর পাশাপাশি উপমহাদেশে পেঁয়াজের সরবরাহ ঘাটতি, বৈরী আবহাওয়া ও আন্তর্জাতিক বাজারে লেনদেন জটিলতাও ভূমিকা রেখেছে বলে কয়েকজন দাবি করেছেন।

‘পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারসাজির কারণে বাজার অস্থির হচ্ছে’ বলে সঙ্কটের এক পর্যায়ে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হলেও এখন আর তা বলা হচ্ছে না।

সঙ্কট শুরুর দুই মাসের মাথায় দাম যখন প্রতি কেজি আড়াইশ টাকায় উঠেছে এমন এক পরিস্থিতিতে শুক্রবার জরুরি বৈঠক করে বিমান যোগে মাধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ এনে সরকারি উদ্যোগেই বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

এবার বাংলাদেশ ও ভারতে পেঁয়াজ চাষের সময় খরা ও আকস্মিক বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই খাদ্যপণ্যের আবাদ। এর ফলে এই বছর মওসুমের শেষ প্রান্তে এসে বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারে পেঁয়াজের দাম ‘অস্বাভাবিকভাবে’ বেড়েছে।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক দেশ ভারতে পেঁয়াজের মূল্য প্রতি কেজি প্রায় একশ রুপিতে পৌঁছেছে, যা স্বাভাবিক সময়ে বিক্রি হত ৮ থেকে ১২ রুপিতে। বাংলাদেশে আমদানি শুরুর পর মিয়ানমারেও পণ্যটির দাম এখন একশ টাকায় পৌঁছেছে বলে ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন।

সতর্ক করা হয়েছিল আগেই

গত কোরবানির ঈদের পর শ্যামবাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনায় বসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ বছর মওসুমের শেষ দিক এসে পেঁয়াজের সঙ্কট হতে পারে বলে সেই বৈঠকে সরকারকে জানিয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা।

রাজধানীর মিরপুর-৬ নম্বর কাঁচা বাজারে ১৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি মিশরীয় পেঁয়াজ। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভিশ্যামবাজারের একজন আমদানিকারক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বৈঠকে আমি বলেছিলাম যে, বৃষ্টি ও অন্যান্য কারণে এবার পেঁয়াজের বিশেষ সঙ্কট হতে পারে। তৎকালীন বাণিজ্য সচিব সেই সময় বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেননি। ব্যবসায়ীরা নিজেদের স্বার্থে আমদানিতে সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে এমন আভাস দিচ্ছে বলে তিনি মনে করেছিলেন।”

তখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্বে ছিলেন মফিজুল ইসলাম। বর্তমানে তিনি অবসরোত্তর ছুটিতে আছেন।

ব্যবসায়ীদের এমন দাবির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বর্তমান সচিব জাফর উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সবার ধারণা ছিল ভারত পূজার পর পর পেঁয়াজ ছেড়ে দেবে। ভারত পেঁয়াজ ছেড়ে দিলে ভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ এনে পোষানো যাবে না। সেই ভয়ে ব্যবসায়ীরা বড় আমদানিতে যায়নি।

“এবার একইসঙ্গে ভারতেও নতুন পেঁয়াজ আসতে দেরি করছে, আবার আমাদের বাজারেও আসতে দেরি হচ্ছে।”

মিরপুর-১ নম্বর বাজারের আড়ৎদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামাল বলেন, “বাজারে এখন পেঁয়াজের সরবরাহ ঘাটতির বিষয়টি একেবারেই দৃশ্যমান। বৃহস্পতিবার আমি শ্যামবাজার থেকে ৫০ বস্তা মিশরীয় পেঁয়াজ কিনতে গিয়ে পেয়েছি মাত্র ১৫ বস্তা। দাম পড়েছে প্রতি কেজি দেড়শ টাকা। আজকে সেই পেঁয়াজই শ্যামবাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ১৯০ টাকা।

“সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে সরকার বিভিন্ন রকম উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু এর পরেও যখন সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি, তাই এর দায়িত্বটি সরকারকেই নিতে হবে। বৃষ্টির কারণে দেশি পেঁয়াজ পচে যাওয়ায় এবার যে সঙ্কট হবে, সেটা আমরা আগে থেকেই বলে আসছিলাম।”

মিশরে লোকসানের অভিজ্ঞতা

২০১৭ সালেও মওসুমের শেষ পর্যায়ে এসে দেশে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গিয়ে প্রতি কেজি ১৪০ টাকায় পৌঁছেছিল। তখন মিশর থেকে পেঁয়াজ এনে লোকসানের মুখে পড়েছিলেন শ্যামবাজারের আমদানিকারক আনোয়ার হোসেনসহ আরও অনেকে।

আনোয়ার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “২০১৭ সালের অভিজ্ঞতা আমিসহ অনেক ব্যবসায়ীকে এবার নিজ উদ্যোগে পেঁয়াজ আমদানি করা থেকে বিরত রেখেছে। এবার আমার পরিচিত এক বন্ধু সেপ্টেম্বরে মিশর থেকে ৫ কনটেইনার পেঁয়াজের এলসি খুলেছিলেন। কিন্তু ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে অর্ধেক এলসি অন্যজনের কাছে হস্তান্তর করে দেন। পরে যখন দেখা গেল মিশরের পেঁয়াজই একমাত্র ভরসা, তখন তিনি বুঝলেন কী ধরাটা খেয়েছেন।”

বর্তমানে বাজারের ঊর্ধমুখী প্রবণতায় দেড়শ টাকা বিক্রি হচ্ছে মিশর ও তুরস্কের পেঁয়াজ। অথচ এই পেঁয়াজের আমদানি মূল্য প্রতি কেজি ৪০ টাকা থেকে ৫০ টাকার মধ্যে রয়েছে বলে কয়েকজন ব্যবসায়ী জানিয়েছেন।

ব্যবসায়ীরা ভারতের পেঁয়াজের আশায় থাকলেও এবার সেখানেও চলছে দুরাবস্থা

ব্যবসায়ীরা ভারতের পেঁয়াজের আশায় থাকলেও এবার সেখানেও চলছে দুরাবস্থানিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে আনোয়ার বলেন, “২০১৭ সালের নির্ধারিত সময়ের এক সপ্তাহ আগে অর্থাৎ অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে ভারতের বাজারে নতুন পেঁয়াজে সয়লাব হয়ে যায়। তারও দুই সপ্তাহ পরে অর্থাৎ নভেম্বরের ১৫ তারিখের দিকে বাংলাদেশের বাজারেও দেশি পেঁয়াজ উঠে। ফলে এই সময়টাতে পেঁয়াজের দাম হঠাৎ করে প্রতি কেজি ১৪০ টাকা থেকে কমে কেবল ৩০ টাকায় নামে।

“সেই সময় মিশর থেকে আমরা লাভের আশায় পেঁয়াজ এনেছিলাম ৪০ টাকা দরে। কিন্তু পেঁয়াজ দেশে পৌঁছাতে পৌঁছাতে বাজার পড়ে যায়। ব্যবসায়ীরা কোটি কোটি টাকার লোকসানের মুখে পড়ে। সেই অভিজ্ঞতা থেকে এবার আমদানি করতে সাহস পাইনি আমিসহ অনেকে।”

অভিযান, জরিমানা ও দাম বেঁধে দেওয়া

পেঁয়াজ নিয়ে কৃত্রিম সঙ্কট মোকাবেলায় গত দুই মাসে দুই হাজারেরও বেশি ব্যবসায়ীকে জেল জরিমানা করেছে সরকার। মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে তা বেশি দামে বিক্রির অপরাধেও জরিমানা করা হয়েছে ব্যবসায়ীদের।

এজন্য আমদানিকারকরা পরিস্থিতি আরও জটিল করেছে বলে মনে করছেন শ্যামবাজারে পাইকারি দোকান আমানত ভান্ডারের পরিচালক মানিক।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সরবরাহ ঘাটতির সুযোগে আমদানিকারকরা দাম বাড়িয়ে দেন। আমরা নির্ধারিত পরিমাণ লাভ রেখে সরবরাহকারীদের বেঁধে দেওয়া মূল্য অনুযায়ী বিক্রি করি। কিন্তু এই ক্ষেত্রে আমদানিকারকদের বাদ দিয়ে আমাদের জরিমানা করা হয় সম্পূর্ণ অযৌক্তিকভাবে।

“সরকার চাইলে কারা এলসির মাধ্যমে পেঁয়াজ এনেছে এবং কত টাকা মূল্যে এনেছে সেটা মুহূর্তেই বের করতে পারে। বাজার পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার তাদের কাছ থেকে সব পণ্য কিনে নিজেরাও বিক্রি করতে পারে। কিন্তু সেই কাজটি করা হয়নি।”

পেঁয়াজ আনা হচ্ছে বিমানে  

বর্তমানে পাইকারিতে দেশি ও মিয়ানমারের পেঁয়াজের দাম যখন দুইশ টাকার কাছাকাছি পৌঁছেছে, তখন মিশর ও তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ আমদানিকারকরা একচেটিয়া মুনাফা করছে বলে মনে করছেন মানিক।

“আমরা জানতে পেরেছি, মিয়ানমারের পেঁয়াজের আমদানি মূল্য ৯০ টাকায় পৌঁছে গেছে। কিন্তু মিয়ানমারের পেঁয়াজ ৩০ থেকে ৪০ ভাগ নষ্ট, খাওয়ার অনুপোযোগী। ফলে ক্ষতি পোষাতে আমদানিকারকরা দাম রাখছেন প্রতি কেজি ১৭০ টাকা থেকে ১৮০ টাকা। তবে মিশরের ক্ষেত্রে এমন সমস্যা নেই। তাদের পেঁয়াজের আমদানি মূল্য প্রতি কেজি ৪০ টাকা থেকে ৫০ টাকায় রয়েছে। অথচ বাজারের সুযোগ নিয়ে মিশরের আমদানিকারকরাও ১৩০ টাকা থেকে ১৪০ টাকায় পণ্য বিক্রি করছে। বাজারে সঙ্কটের কারণে সেই পেঁয়াজ খুব চলছেও। তাহলে সেই দিকে নজর দেবে কে?” প্রশ্ন রাখেন এই ব্যবসায়ী।

শ্যামবাজারের অন্যতম আমদানিকারক হাজী আব্দুল মাজেদও একই কথা বলেছেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে যেসব আমদানিকারকের হাতে মিশরের পেঁয়াজ রয়েছে তারা বেশ লাভবান হচ্ছেন। এক সপ্তাহ আগে শ্যামবাজারে মিশরের পেঁয়াজের পাইকারি মূল্য প্রতি কেজি ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকায় বেঁধে দিলেও তা এখন আর কার্যকর নেই। ফলে মিশরের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৩০ টাকার কাছাকাছি।”

এক সময় নিজের কাছে মিশর থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ থাকলেও তা এখন আর নেই বলে দাবি করেন মাজেদ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব জাফর বলেন, “গত দুই মাসে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা অভিযান চালিয়ে কৃত্রিম সঙ্কট করে দাম বাড়ানোর কারণে দুই হাজার ব্যবসায়ীকে শাস্তি দিয়েছে। জরিমানা আদায় করা হয়েছে অন্তত দুই কোটি টাকা। কিন্তু পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটেছে খুবই সামান্য। আসলে এটা মার্কেট ট্রেন্ড। এই মুহূর্তে আমরাও হতাশ।”

অভিযানের মুখে শ্যামবাজার আড়ৎদার সমিতির নেতারা পেঁয়াজের দাম বেঁধে দেওয়ার পর সংকট বেড়েছে বলে জানান আমদানিকারক আনোয়ার হোসেন।

“এরপর আমদানিকারকরা তিন দিন শ্যামবাজারে কোনো পণ্য আনেনি। ফলে ঢাকার প্রধান পাইকারি বাজারে ফাঁকা অবস্থা পুরো শহরে দাম বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে। এর প্রভাব পড়েছে সারা দেশে।”

ওই সময় নিজেও মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ এনে এই বাজারে না ছেড়ে খুলনার এক ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করেছেন বলে জানান তিনি।

আনোয়ার বলেন, “আমি মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ এনেছি যার আমদানি মূল্য পড়েছে প্রতি কেজি ৯০ টাকা। কিন্তু শ্যামবাজারে পাইকারি দাম বেঁধে দেওয়া হয়েছে ৮০ টাকা। তাহলে আমি কেন, কীভাবে এই বাজারে পেঁয়াজ দেব?

“আমি ১১০ টাকায় খুলনার এক ব্যবসায়ীর কাছে কয়েক ট্রাক পেঁয়াজ বিক্রি করে দিলাম। তিন দিন বন্ধ থাকার পর শ্যামবাজারে মিয়ানমারের পেঁয়াজের দাম উঠল প্রতিকেজি ১৮০ টাকা থেকে ১৯০ টাকা। খুলনার ওই ব্যবসায়ী আমার কাছ থেকে কেনা পেঁয়াজ নিয়ে এখন আমার ঢাকায় দৌঁড় দিল।”

চাহিদার তুলনায় সরবরাহ

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে দেশে পেঁয়াজের মোট উৎপাদন ২৪ লাখ টন। বিভিন্ন কারণে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর ১৮ লাখ টনের মতো দেশি পেঁয়াজ টিকে থাকে। এর সঙ্গে বার্ষিক চাহিদা মেটাতে ভারত থেকে ১০ লাখ টন আমদানি করতে হয়। অর্থাৎ দেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা ২৮ লাখ টন।

তবে ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মন্ত্রণালয়ের নিরূপণ করা চাহিদা এই পরিসংখ্যান সঠিক নয়। প্রকৃত চাহিদা আরও বেশি।

রাজধানীর মিরপুর-৬ নম্বর কাঁচা বাজারে শুক্রবার প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৪০-২৫০ টাকা দরে। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভিভোক্তা অধিকার রক্ষায় নাগরিক সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ- ক্যাবের চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অর্থনৈতিক সক্ষমতা দিন দিন বাড়ছে, ফলে মানুষের ক্রয় ক্ষমতাও বাড়ছে। বিষয়গুলো মাথায় রেখে পেঁয়াজের নতুন চাহিদা সম্পর্কে পর্যালোচনা করা প্রয়োজন।”

পেঁয়াজের প্রকৃত চাহিদা ‍নিরূপণে নতুন করে বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন বানিজ্য সচিবও।

তিনি বলেন, “পরিসংখ্যানে কিছু ঝুঁকি থাকে। তবে পরিসংখ্যান যদি মেনেও নেই তাহলেও আমাদের নয় লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। কিন্তু এর মধ্যে ভারত থেকে পেঁয়েছি মাত্র তিন লাখ টন। যেখানে ৯ লাখ টন পাওয়ার কথা সেখান থেকে যদি মাত্র তিন লাখ টন পাই তাহলে চলে কী করে?”

কী ভাবছে সরকার?

বাজারের এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে বিভিন্ন মহল থেকে সরকারের ব্যর্থতার কথা বলা হলেও তা মেনে নিতে নারাজ বাণিজ্য সচিব জাফর উদ্দিন।

তিনি বলছেন, সরকার সময়মতো বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও তা ধাপে ধাপে বাধাগ্রস্ত হওয়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি ভারত, মিয়ানমারসহ বিভিন্ন দেশে পেঁয়াজের দামে ঊর্ধগতিও এখানে ভূমিকা রেখেছে।

“সবাই বলে আমাদের ব্যর্থতার কথা। কিন্তু এই মুহূর্তে আমাদের আর কী করার আছে? ব্যর্থতার কী সংজ্ঞা আমরা বুঝলাম না। আমরা কি ইচ্ছে করে ঝড়-বৃষ্টি ডেকে আনলাম? এটা তো প্রকৃতিক বিষয়।”

বাণিজ্য সচিব জাফর উদ্দিন

বাণিজ্য সচিব জাফর উদ্দিনবিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে বার বার হোঁচট খাওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, মেঘনা, এস আলম ও সিটি গ্রুপকে পেঁয়াজ আমদানিতে যুক্ত হওয়ার আনুরোধ করলে তারা তা শুনেছে। কিন্তু এই বাজারের অভিজ্ঞতা তাদের ছিল না, যা একটা সমস্যার সৃষ্টি করেছে। মিয়ানমারের বাজারেও এখন দাম বেড়ে প্রতি টন হাজার ডলার ছাড়িয়েছে।

“মিশর পুরো টাকা হাতে না পেয়ে পণ্য জাহাজিকারণে রাজি হল না। আবার যখন মিশরের পণ্য পাওয়া গেল তখন ঠিক সময়ে জাহাজ পাওয়া গেল না। এসব কারণে ২০ দিনের মধ্যে মিশর-তুরস্কের পেঁয়াজ জাহাজে করে দেশে আনার যে আশা আমরা করেছিলাম তা হয়নি। এখন সব মিলিয়ে দেড় মাস সময় লেগে যাবে বলে মনে হচ্ছে।”

দরকার আরও সতর্ক পদক্ষেপ

ক্যাবের চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, “সরকার বিভিন্ন রকম উদ্যোগ নিয়েছে এটা সত্য। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে উদ্যোগটা পর্যাপ্ত ছিল না।

“সরকার বাজার ব্যবস্থাপনার ওপর একটা নজরদারি করেছে। কোথাও কোথাও জেল- জরিমানা করেছে, যা ব্যবসায়ীদের আরও আতঙ্কগ্রস্ত করেছে। সরবরাহ পরিস্থিতির অবনতি ও কিছু ব্যবসায়ীর লোভ-লালসার কারণে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে বড় আমদানির উদ্যোগ নিচ্ছে না লোকসানের আশঙ্কায়।”

পেঁয়াজ সমস্যার সমাধানে সরকারকে ভবিষ্যতে আরও ‘ডায়নামিক’ উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

গোলাম রহমান বলেন, “কূটনৈতিকভাবে যদি ভারতকে রাজি করানো যেত তাহলে হয়ত সঙ্কট কিছুটা কেটে যেত। সার্বিক পরিস্থিতির জন্য কাউকে এককভাবে দোষারোপ না করে আমি বলব, বাজার বিপর্যয় বা মার্কেট ফেইলর। এই পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সে রকম সহযোগিতা আসেনি।”

দীর্ঘমেয়াদে সমস্যার সমাধানে দেশি কৃষকদের প্রণোদনা ও বিভিন্ন রকম উৎসাহমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

“এ ধরনের সঙ্কট যাতে বার বার না হয় সেজন্য পেঁয়াজ উৎপাদনে জোর দিতে হবে। প্রয়োজন বুঝে ভরা মওসুমে স্বল্প সময়ের জন্য হলেও ৫-১০ শতাংশ আমদানি শুল্ক প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে সেটা সারা বছর নয়। আমাদের দেশে একবার যদি কোনো ট্যাক্স বসে সেই ট্যাক্স আর ওঠে না। এই ব্যাপারে একটা ডায়নামিক অ্যাপ্রোচ থাকা দরকার।”