বৃহস্পতি. এপ্রিল 25th, 2024

লিটনের সেঞ্চুরি, সাকিবের ৫ উইকেটে রেকর্ড গড়া জয়

শুরু আর শেষে কত অমিল! ২২ ওভারের বেশি বাকি থাকতেই ম্যাচ শেষ, রেকর্ড ব্যবধানে জয়। এসবকিছুই বলবে, হেসেখেলে জয়। অথচ শুরুতে কী বিপাকেই না পড়েছিল বাংলাদেশ! পরিণত ব্যাটিংয়ে লিটন দাসের লড়িয়ে সেঞ্চুরি সেই বিপদ থেকে উদ্ধার করে দলকে। পরে বল হাতে জ্বলে ওঠেন সাকিব আল হাসান। শুরুটা নড়বড়ে হলেও তাই শেষটায় এক বিন্দুতে মিলে যায় বাংলাদেশের প্রত্যাশা আর প্রাপ্তি।

তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয় ১৫৫ রানে।

দেশের বাইরে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয় এটিই। আগেরটি ছিল ২০১৮ এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুবাইয়ে।

হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে শুক্রবার বাংলাদেশের ২৭৬ রান তাড়ায় জিম্বাবুয়ে করতে পারে মাত্র ১২১।

এই জয়ের ভিত গড়া লিটনের ব্যাটে। সবশেষ ওয়ানডে সিরিজে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শেষ ম্যাচে একাদশ থেকে বাদ পড়েছিলেন তিনি। এবার ফিরেই প্রিয় প্রতিপক্ষের বিপক্ষে করলেন সেঞ্চুরি। তার চার ওয়ানডে সেঞ্চুরির তিনটিই হলো জিম্বাবুয়ের সঙ্গে।

সেঞ্চুরির পর অবশ্য বেশি এগোতে পারেননি তিনি। তবে ১১৪ বলে তার ১০২ রানের ইনিংসটিই বিপর্যয় পেরিয়ে এগিয়ে নেয় দলকে।

ব্যাটিংয়ে ব্যর্থ দলেও বোলিংয়ে সাকিবের দিনটি ছিল স্মরণীয়। মাশরাফি বিন মুর্তজাকে ছাপিয়ে বাংলাদেশের সফলতম ওয়ানডে বোলার হওয়ার উপলক্ষ রাঙান তিনি ৩০ রানে ৫ উইকেট নিয়ে।

ম্যাচের সেরা অবশ্য লিটনই। তার আর বেশিরভাগ ইনিংসের মতো স্ট্রোকর ফুলঝুরি ছোটানো ইনিংস এটি নয়। প্রথম রানের দেখা পেতে লাগে তার ১০ বল, প্রথম ১৫ ওভারে মারেননি বাউন্ডারি। পঞ্চাশ স্পর্শ করেন ৭৮ বলে, অনায়াসেই যা তার মন্থরতম ওয়ানডে ফিফটি। পরে পুষিয়ে দেন ঠিকই। চেনা নান্দনিক ব্যাটিং নয়, তবে দারুণ কার্যকর। এ দিনের পরিস্থিতিই ছিল এমন।

সকালে সহায়ক উইকেট-কন্ডিশন পেয়ে বাংলাদেশকে চেপে ধরেন জিম্বাবুয়ের পেসাররা। হারারেতে কাঙ্ক্ষিত টস জিতে বোলিং নেন ২০০তম ওয়ানডে খেলতে নামা ব্রেন্ডন টেইলর।

সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু ম্যাচে ঘাসের ছোঁয়া থাকা উইকেটে

থেকে থেকে মুভমেন্ট-বাউন্স, দুটিই মিলতে থাকে। প্রথম দুই ওভারই হয় মেডেন। তৃতীয় ওভারে বিদায় নেন তামিম। ব্লেজিং মুজারাবানির বাড়তি বাউন্সের বল শরীরে কাছ থেকে কাট করতে গিয়ে বাংলাদেশ অধিনায়ক ফেরেন শূন্য রানে।
বাংলাদেশের সফলতম ব্যাটসম্যান এখন শূন্যের রেকর্ডেও বাংলাদেশের সবার ওপরে। ওয়ানডেতে তার শূন্য হলো ১৯টি, তিন সংস্করণ মিলিয়ে ৩৪টি।

সাকিব তিনে নেমে দৃষ্টিনন্দন এক স্ট্রেট ড্রাইভে বাউন্ডারিতে শুরু করেন প্রথম বলেই। তবে এরপরই ঝুঁকির পথে হাঁটতে থাকেন। তাতে দুটি বাউন্ডারি যেমন ধরা দেয়, তেমনি কয়েকবার অল্পের জন্য বেঁচে যান। তাতে শেষ রক্ষা হয়নি। মুজরাবানির বলেই তিনি কাভারে ধরা পড়েন ১৯ রানে।

মুশফিকুর রহিম না থাকায় চারে সুযোগ পাওয়া মোহাম্মদ মিঠুন হেলায় হারান সুযোগ। কয়েকটি দারুণ শটে শুরুটা ভালো করে আউট হন টেন্ডাই চাতারার অনেক বাইরের বল তাড়া করে (১৯ বলে ১৯)। বাজে শটের পালায় মিঠুনকে অবশ্য ছাড়িয়ে যান মোসাদ্দেক হোসেন (১৫ বলে ৫)। বাংলাদেশের রান তখন ৪ উইকেটে ৭৪।

এক প্রান্ত আঁকড়ে ছিলেন লিটন। তাকে সঙ্গ দেন বিপর্যয়ে বরাবরের ভরসা মাহমুদউল্লাহ। গড়ে ওঠে প্রতিরোধের জুটি।

পার্ট টাইম লেগ স্পিনার রায়ান বার্লকে দারুণ কাভার ড্রাইভে চার মেরে লিটন ফিফটিতে পা রাখেন ৭৮ বলে। ওয়ানডেতে আগে যে ছয়বার পঞ্চাশ স্পর্শ করেন তিনি, একবারই তাতে বল লেগেছিল পঞ্চাশের বেশি (জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই, ৫৪ বলে)।

ফিফটির পর অবশ্য রানের গতি বাড়ান তিনি। ততক্ষণে উইকেটও হয়ে আসে সহজ। শতরানের পথে এগোতে থাকা জুটি ভাঙে মাহমুদউল্লাহর বিদায়ে। লুক জঙ্গুয়ের স্লোয়ার বাউন্সার পুল করতে গিয়ে তিনি আউট হন ৩৩ বলে। দুজনের জুটি থামে ১০৩ বলে ৯৩ রানে।ছবি: জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট

ছবি: জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটলিটন এরপর এগিয়ে যান আফিফকে সঙ্গে নিয়ে। শতরানে পা রাখেন ১১০ বল খেলে।

তবে মাইলফলক ছোঁয়ার পর ইনিংসটাকে আর বড় করতে পারেননি। রিচার্ড এনগারাভাকে পুল করে ধরা পড়েন সীমানায়।

দলের অবস্থা তখনও খুব শক্ত নয়। আফিফ ও মেহেদী হাসান মিরাজের জুটি সেখান থেকে দলকে নিয়ে যায় আড়াইশ পেরিয়ে। সপ্তম উইকেটে ৪২ বলে ৫৮ রানের জুটি গড়েন দুজন। ২৫ বলে ২৬ করেন মিরাজ।

আফিফ শুরুতে সিঙ্গেল নিয়ে এগিয়ে শেষ দিকের দাবি মেটান দারুণ দুটি ছক্কায়। জঙ্গুয়ের সোজা বল স্কুপ করতে গিয়ে প্রথম ফিফটি তিনি পাননি। তবে ৩৫ বলে ৪৫ রানের ইনিংসটি পরিস্থিতির বিবেচনায় ছিল মহামূল্য।

বাংলাদেশের স্কোর যে উচ্চতায় পৌঁছায়, তা টপকাতে জিম্বাবুয়ের অনভিজ্ঞ ব্যাটিং লাইন আপকে করতে হতো বিশেষ কিছু। তা তারা পারেনি।

অভিষিক্ত ওপেনার টাডিওয়ানাশে মারুমানি স্টাম্পে টেনে আনেন সাইফ উদ্দিনের বল। তাসকিন আহমেদের ইনকাটারে ডিগবাজি খায় ওয়েসলি মাধেবেরের মিডল স্টাম্প।

অধিনায়ক টেইলর ইতিবাচক শুরু করলেও উইকেট উপহার দেন সাকিবকে। অভিষিক্ত ডিওন মায়ার্স শুরুটা ভালো করে ফেরেন শরিফুল ইসলামের বলে উইকেট বিলিয়ে।

এরপর সাকিবের সামনে ভেঙে পড়ে জিম্বাবুয়ের মিডল ও লোয়ার অর্ডার। কেবল রেজিস চাকাভা স্রোতের বিপরীতে খেলে যান। তবে ৫১ বলে ৫৪ করে তিনিও আউট হন সাকিবের বলে।

ফিল্ডিংয়ের সময় চোট পেয়ে ব্যাট করতে পারেননি টিমাইসেন মারুমা। শেষ উইকেট নিয়ে সাকিব পূর্ণ করেন ৫ উইকেটে। ওয়ানডেতে এই স্বাদ পেলেন তিনি তৃতীয়বার।

বাংলাদেশ আরেকবার পেল চেনা স্বাদ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টানা ১৭ ওয়ানডে জয়!

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৭৬/৯ (তামিম ০, লিটন ১০২, সাকিব ১৯, মিঠুন ১৯, মোসাদ্দেক ৫, মাহমুদউল্লাহ ৩৩, আফিফ ৪৫, মিরাজ ২৬, সাইফ ৮*, তাসকিন ১, শরিফুল ০*; মুজরাবানি ১০-২-৪৭-২, চাতারা ১০-১-৪৯-১, এনগারাভা ১০-১-৬১-২, জঙ্গুয়ে ৯-০-৫১-৩, বার্ল ৫-০-৩১-০, মাধেবেরে ৬-০-৩৭-০)।

জিম্বাবুয়ে: ২৮.৫ ওভারে ১২১ (মাধেবেরে ৯, মারুমানি ০, টেইলর ২৪, মায়ার্স ১৮, চাকাভা ৫৪, বার্ল ৬, জঙ্গুয়ে ০, মুজরাবানি ২, চাতারা ২*, এনগারাভা ০, মারুমা আহত অনুপস্থিত ; তাসকিন ৫-০-২২-১, সাইফ ৪-০-২৩-১, সাকিব ৯.৫-০-৩০-৫, শরিফুল ৬-০-২৮-১, মিরাজ ৩-০-১৫-০, মোসাদ্দেক ১-০-১-০)।

ফল: বাংলাদেশ ১৫৫ রানে জয়ী।

সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে।

ম্যান অব দা ম্যাচ: লিটন দাস।