মঙ্গল. মে 7th, 2024

কত টাকা পেনশন দিলে মানুষ ‘অলস হবে না’, জানতে চায় সরকার

ঢাকার গুলশানের একটি হোটেলে বুধবার সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এবং অক্সফাম বাংলাদেশের আয়োজনে 'ইউনিভার্সাল পেনশন স্কিম ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান।
ঢাকার গুলশানের একটি হোটেলে বুধবার সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এবং অক্সফাম বাংলাদেশের আয়োজনে ‘ইউনিভার্সাল পেনশন স্কিম ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান।
দেশের সব বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিক ও হতদরিদ্র মানুষকে সার্বজনীন পেনশনের আওতায় আনতে চায় সরকার। তবে পেনশনভোগীদের কত টাকা দেওয়া হলে তারা ‘অলস হয়ে যাবেন না’ সে তথ্য জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

সেজন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি বিশেষ সেল ইতোমধ্যে এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

বুধবার রাজধানীর গুলশানের গার্ডেনিয়া ব্যাংকোয়েট হলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও যুক্তরাজ্যভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা অক্সফামের যৌথ আয়োজনে ‘বাংলাদেশে সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা প্রবর্তনে একটি কাঠামোর খোঁজে’ শিরোনামে এক সেমিনারে একথা বলেন পরিকল্পনামন্ত্রী।

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যে্যর সঞ্চালনায় সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির আরেক সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান।

প্রবন্ধে তিনি বলেন, “আমরা এখন স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হতে যাচ্ছি। কিন্তু আমাদের ৬৫ বছরের বেশি বয়স্ক বা সার্বজনীনভাবে জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের জীবনের নিরাপত্তায় কোনো কর্মসূচি নেই।

”২০৩১ সালে আমাদের ১২ শতাংশ মানুষ ৬৫ বছরের বেশি বয়সের হবে। আর ২০৪১ সালে তা ২০ শতাংশ পেরিয়ে যাবে। তখন ওই বিপুল বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিকদের জীবনের নিরাপত্তায় কোনো কিছুই নেই। তাদের জন্য কোনো চাকরি বা আয়ের কোনো সংস্থান নেই।”

বর্তমানে প্রায় ৬০ শতাংশ বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিক কোনো না কোনোভাবে ভাতার আওতায় রয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, “যেমন বর্তমানে ৪০ শতাংশ বয়োজ্যেষ্ঠ বয়স্ক ভাতা পান। ৭ শতাংশ মানুষ পেনশন পান। আরও ১০ শতাংশ মানুষের অন্যভাবে ভাতার ব্যবস্থা আছে। বাকি ৪০ শতাংশ মানুষের ব্যবস্থা করতে পারলেই হবে।”

সিপিডির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে ৬০ শতাংশ জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের ভাতায় ব্যয় হয় মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) মাত্র শুন্য দশমিক ১৪ শতাংশ। আর শতভাগ বয়স্ক মানুষকে বর্তমান সুবিধার আওতায় আনতে জিডিপির শুন্য দশমিক ২ শতাংশ বরাদ্দের প্রয়োজন হবে।

দেশের বাজেট ব্যবস্থাপনার কাঠামো অনুযায়ী এ বরাদ্দ সম্ভব বলে মনে করেন মোস্তাফিজুর রহমান।

এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী মান্নান বলেন, “দেশের বয়োজ্যেষ্ঠ সকল নাগরিকের জন্য সার্বজনীন পেনশনের ব্যবস্থা অবশ্যই বর্তমান সরকারই করতে পারবে।

“মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হতদরিদ্র মানুষকেও এতে অন্তর্ভুক্ত করতে চান। কিন্তু কত টাকা পেনশন বা ভাতা দিলে তাদের উদ্যোগ বাদ দিয়ে আবার সরকারি ভাতা দিয়েই শুধু ডাল-ভাত খেয়ে বসে থাকার চিন্তা করবে না, তা জানতে চান প্রধানমন্ত্রী।”

মন্ত্রী বলেন, “আমরা যে পেনশনের চিন্তা করছি বর্তমানে আমাদের যে ১১ শতাংশ হতদরিদ্র আছে তাদেরকেও এই ভাতার আওতায় আনতে হবে। এসব বিষয় নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও আলোচনা তোলেন। এখন আমরা বয়স্কভাতা হিসেবে ৫০০-৬০০ টাকা দিচ্ছি। মুক্তিযোদ্ধা ভাতা আরও বেশি দিচ্ছি।

“মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সার্বজনীন পেনশনের ব্যবস্থা করলে মাথাপিছু কত দেওয়া দরকার তাও আমাদের কাছে জানতে চান। তখন আমরা এই ভাতা আরও বাড়িয়ে দেওয়ার প্রস্তাব করলে তিনিও একমত পোষণ করেন।

“কিন্তু তার ভয় এই ভাতা যদি বাড়িয়ে দেওয়া হয় তাহলে ওই লোকগুলো যদি আবার শুধু এই ভাতার ওপর নির্ভর করে বসে থাকে, আর যদি কিছু না করে?”

তাই ‘কী পরিমাণ ভাতা’ দিলে মানুষ অলস হবে না সে তথ্য সিপিডির কাছেও একটি গবেষণার মাধ্যমে পেতে চান পরিকল্পনামন্ত্রী।

সেমিনারে মন্ত্রী বলেন, দেশের ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বের সব নাগরিককে পেনশনের আওতায় আনতে ‘কখন ও কীভাবে’ প্রস্তুতি নিতে হবে, তা ঠিক করতে সরকারি-বেসরকারি উভয় পর্যায় থেকে কাজ করতে হবে।  

সেমিনারে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য বলেন, “বাংলাদেশ একটি আধুনিক ও প্রগতিশীল মধ্য আয়ের দেশ হবে আর বয়োজ্যেষ্ঠ প্রায় অর্ধেক নাগরিকের নিরাপত্তা থাকবে না, এটা হবে না।”

দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির পরিমণ্ডলের সঙ্গে মিলিয়ে এটা করার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বেসরকারি উদ্যোক্তাদেরও এতে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান।

সেমিনারে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, সরকারেরও বিষয়টি নিয়ে গবেষণার দরকার আছে।

আর সিপিডিসহ দেশের বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ নিয়ে গবেষণা করে সরকারকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান তিনি।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।