বুধ. মে 15th, 2024

রংপুরের কাউনিয়ায় গরুর ক্ষুরা রোগ প্রতিরোধে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন প্রদান

স্টাফ রিপোর্টার :
রংপুরের কাউনিয়ায় দেখা দিয়েছে গরুর ক্ষুরা রোগ। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে কয়েকটি গরু মারা গেছে। এতে আতঙ্কিত হয়েছেন খামারি ও কৃষকরা। এ রোগ প্রতিরোধে আক্রান্ত এলাকায় সেচ্ছাসেবীদের মাধ্যমে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিনামূল্যে ভ্যাকসিন প্রদানসহ গরু পালনকারীদের সচেতনতার জন্য কাজ করে যাচ্ছে উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ।

সরেজমিনে ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত গরুর মুখ ও পায়ে ঘা হওয়ার ফলে গরু খাদ্য গ্রহণ করতে পারে না এবং খুঁড়িয়ে হাটে, জিহ্বা, দাঁতের মাড়ি, মুখের ভেতর এবং পায়ের ক্ষুরের মাঝে ফোসকা হয়, পরে ফোসকা ফেটে লাল ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। ফোসকা ফেটে ঘা হয়েছে, পা ফুলে গেছে । আক্রান্ত গরুর মুখ থেকে লালা পড়তে থাকে, ঠোঁটের নাড়াচড়ার ফলে সাদা ফেনা বের হয়েছে। ঘাষ বা অন্য কিছু খেতে না পাড়ায় গরু দুর্বল হয়ে পড়েছে। ঘা বেশি হওয়ায় চলা ফেরা করতে পারছেনা। ক্ষত স্থানে মাছি ডিম পাড়ে ফলে পোকা হয়েছে। ফলে আক্রান্ত গরুর পায়ে কিছু লেগে আছে যে কারণে পা ছুড়তে থাকে এবং শ্বাসকষ্ট, জ্বর ও উচ্চ তাপমাত্রায় গরুকে দেখা যায়।


উপজেলা সদর বালাপাড়া ইউনিয়নের গের্দ্দ বালাপাড়া গ্রামের গরু পালন কারী নিতাই রায় বলেন, গত কয়েক বছর আগে ক্ষুরা রোগে গাভীসহ বাছুর আক্রান্ত হয়েছিল। চিকিৎসা করে গাভীকে বাঁচানো গেলেও বাছুরটি মারা যায়।

ক্ষুরা রোগ প্রতিরোধে উপজেলা ভেটেনারি সার্জন ডা: মোহাম্মদ শাকিল আহমেদ জানান, আক্রান্ত পশুকে সুস্থ পশু থেকে আলাদা করে পরিষ্কার শুষ্ক জায়গায় রাখতে হবে। কোনো অবস্থাতেই কাদা বা পানিতে রাখা যাবে না। এ রোগ মারাত্মক ছোঁয়াচে তাই আক্রান্ত পশুকে অন্যত্র নেয়া এবং বাইরের কোনো পশুকে এ এলাকায় আনা উচিৎ নয়। আক্রান্ত এলাকার এবং পার্শ্ববর্তী এলাকার সকল সুস্থ পশুকে অবশ্যই টিকা দিতে হবে। আক্রান্ত পশুকে নরম ও তরল খাবার যেমন- ভাতের ফ্যান বা জাউভাত খেতে দিতে হবে। এবং যিনি আক্রান্ত পশুর সেবাযতœ করবেন তার ব্যবহৃত কাপড়-চোপড়, হাত-পা এবং ব্যবহৃত অন্যান্য জিনিস অবশ্যই জীবাণু নাশক ওষুধ দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। মৃত পশুকে মাটির নিচে পুঁতে অথবা পুড়িয়ে ফেলতে হবে। পশুর ঘর সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে। সঙ্গনিরোধ বা কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থা যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে হবে। কারণ এ ব্যবস্থা ছাড়াই সীমান্তবর্তী দেশ থেকে প্রতিদিন অসংখ্য গরু বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করায় এ রোগ প্রতিরোধ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। তাই রোগ দেখা দেয়ার সাথে নিকটতম প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল পরামর্শে প্রাণির চিকিৎসা করাতে হবে।


উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ সিঞ্চিতা রহমান জানান, ইতোমধ্যে ক্ষুরা রোগ প্রতিরোধে আক্রান্ত এলাকায় উপজেলা পরিষদের সহয়তায় বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেয়া কর্যক্রম চলমান হয়েছে। যে সব এলাকায় খুরা রোগের খবর পাচ্ছি সেসব এলাকায় সেচ্ছাসেবীদের মাধ্যমে বাড়ী বাড়ী গিয়ে সেখানে ভ্যাকসিন প্রদান করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন ক্ষুরা রোগ ভাইরাস সংক্রামক হওয়ায় এলাকায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তাই ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত গরু কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থা জোরদারকরণসহ গরু পালনকারীদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ধরনের কাজ করে যাচ্ছি। ক্ষুরা রোগ চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ ব্যবস্থাই বেশি কার্যকর। একটু সচেতন থাকলে এবং সময়মতো প্রতিষেধক টিকা দিলে গবাদিপশুকে সহজেই এ রোগ থেকে রক্ষা করা সম্ভব। সেই সাথে পশুর পালনকারীদেরকে রোগ প্রতিরোধে সচেতন হওয়ার আহবান জানান তিনি।