September 21, 2025

পীরগাছায় সুলতানার স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণতবিয়ের ২৮ দিন পর খবর আসে সুলতানা আর বেঁচে নেই

0
IMG-20250730-WA0004


পীরগাছা (রংপুর) প্রতিনিধি:
রংপুরের পীরগাছা উপজেলার বড়দরগা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুলতানা (১৪)। প্রতিদিনের মতো গত ২৪ জুন স্কুলের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়েছিল সে। কিন্তু সেদিন আর ফেরা হয়নি। বাবা-মা ভাবেননি এই স্কুল যাত্রাই হবে মেয়ের জীবনের শেষ যাত্রা।

সুলতানার বাবা নজরুল ইসলাম জানান, স্কুল ছুটির পর মেয়েকে না পেয়ে চারদিকে খোঁজ শুরু করেন তিনি। বান্ধবীদের বাড়ি, আত্মীয়স্বজন, সম্ভাব্য সব জায়গায় খুঁজেও সুলতানার কোনো খোঁজ মেলেনি। এমন অবস্থায় এক অজানা মোবাইল নম্বর থেকে ফোন আসে। ফোনের ওপাশ থেকে বলা হয়, তার মেয়ে সুলতানা প্রেমের সম্পর্কের কারণে ফারুক হোসেন নামে এক ছেলের বাড়িতে আছে। তারা তাকে বিয়ে দিতে চায়।

নজরুল বলেন, ‘আমি তাদের বললাম, মেয়ের বয়স মাত্র ১৪ এখন বিয়ে দেওয়া সম্ভব না। কিন্তু তারা হুমকি দেয়, বিয়ে দিতেই হবে, না হলে নিজেরাই দিবে। আমি খুব গরিব মানুষ, একদিন কাজ না করলে ভাত জোটে না। এলাকার কিছু মানুষও মামলা করতে নিরুৎসাহ করে। আমি ভীত হয়ে কিছুই করতে পারিনি।’

কিন্তু ২৮ দিন পর ২২ জুলাই সকাল। আবারও সেই মোবাইল নম্বর থেকে ফোন আসে। বলা হয় ‘আপনার মেয়ের টনসিল ফেটে মারা গেছে।

সুলতানার বাবার ভাষ্য, একটা মেয়ে টনসিল ফেটে মারা যেতে পারে? এটা বিশ্বাস হচ্ছিল না। লোক পাঠিয়ে নিশ্চিত হই, তাকে হত্যা করে গলায় ফাঁস দেওয়া হয়েছে। এটা আত্মহত্যা নয়, পরিকল্পিত হত্যা। এরপর আমি মাহিগঞ্জ থানায় যাই মামলা করতে।’

নজরুল বলেন, থানায় কেউ না থাকায় ওসি সাহেব তাকে মেকুড়া মাদরাসা পাড়ার ঘটনাস্থলে ডাকেন। সেখানে গিয়ে দেখেন, অভিযুক্ত ফারুক হোসেনের পরিবার টাকা দিয়ে বিষয়টি ‘মীমাংসা’ করতে চায়। তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। মামলা করার অনুরোধ জানান। কিন্তু পুলিশ মামলা নেয়নি।

অবশেষে উল্টো অভিযুক্তের বাবা নুর হোসেন ইউডি (অপমৃত্যু) মামলা দায়ের করেন। নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি স্পষ্টভাবে হত্যা মামলা করতে চাইলেও পুলিশ ইউডি মামলা নেয়। এটা রহস্যজনক। পরে পুলিশ বলেছিল, মামলাটি নেওয়া হবে, কিন্তু আর পাত্তা দেয়নি।’

বিচারবঞ্চিত এক বাবার আহাজারি ‘আমার মেয়ে সুলতানাকে তারা ফুসলিয়ে নিয়ে গিয়েছিল, জোর করে বিয়ে দিয়ে দিনের পর দিন নির্যাতন করেছে। তারপর হত্যা করে গলায় দড়ি দিয়েছে। এখন সেটা আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিচ্ছে। আমি এই ঘটনার বিচার চাই, আমি হত্যা মামলা দায়ের করতে চাই।’

স্থানীয় শামসুল আলম বলেন,  আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেছি এটা গলায ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার ঘটনা না। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে ফাঁসে ঝুলানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
সাদ্দাম হোসেন নামে আরেকজন বলেন, মেয়েটাকে তারা পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। এ ঘটনায় সঠিক বিচার হওয়া প্রয়োজন।

সুলতানার শ্বশুর নুর হোসেন বলেন,  টনসিল ফেটে নয়, মনে হয় গলায় ফাঁস দিয়ে মৃত্যু হয়েছে। আমি বিছানার উপর লাশ দেখতে পেয়েছি।
রংপুর মেট্রোপলিটনের মাহিগঞ্জ থানার ওসি আব্দুল কুদ্দুস বলেন, যে বাড়িতে মারা যায়, সে বাড়ি থেকে একজনকে মামলার বাদী বানাতে হয়। তাই ছেলের বাবা বাদী হয়েছেন। ইউডি মামলা হলে আর মামলার সুযোগ নেই। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে যদি হত্যার বিষয় আসে তাহলে হত্যা মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *